শশাঙ্ক প্রধান : পরবের লেগেছে বাংলার গ্রামে গ্রামে। সংক্রান্তির পরব, দক্ষিণায়ন কাটিয়ে সূর্য চলেছেন উত্তরায়নের পথে। এবার বেলা বাড়ার দিন আর শীত বুড়ির বিদায়। মকর সংক্রান্তি পেরিয়ে মাঘ মাসের পয়লা দিনেও চলছে পরবের ধুম।

আদিবাসী সমাজে আবার এই পরব চলবে চারদিন। আর পরব মানেই প্রিয়জনের সমাদর। সেই প্রিয়জনকে কাছে পেয়েই পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানার ঝাঁঝিয়ার নারী-পুরুষের আবদার, ‘তুকেও লাচতে হবেক আমাদের সাথে ।’ মানুষটি আর কেউ নয়, ডেবরার বিধায়ক তথা রাজ্যের কারিগরী শিক্ষামন্ত্রী হুমায়ুন কবীর।
শনিবারের বারবেলায় জনতার আবদার মেটাতে নাচতে নেমে পড়লেন রাজ্যের প্রাক্তন আইপিএস আধিকারিক। উৎসাহিত জনতা ফের সজোরে বাজাতে শুরু করলেন ধামসা, মাদল। সমবেত নারী পুরুষের তালে তালে পা মেলালেন হুমায়ুন কবীর। মন্ত্রীর সেই উদ্যোমে রীতিমত হতবাক তাঁর সহকর্মীরা। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতেই পারছেননা তাঁরা। আদিবাসী সমাজের এত কাছাকাছি থেকেও তাঁরা যে তাল রপ্ত করতে পারেননি তাই কিনা অনায়াসে করে ফেলছেন ষাটোর্ধ্ব মন্ত্রী। সমবেত জনতা তখন সহর্ষ কুলকুলিতে ফেটে পড়েছেন আর বলছেন, বা: বা: বেড়ে হয়ঠে রে!
এমনিতেই সংস্কৃতি মনস্ক মন্ত্রী এককালে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন মেদিনীপুর কলেজ কলিজিয়েট ময়দানে ফুটবল পায়ে। দুরন্ত ফরোয়ার্ড হিসাবে নাম ছিল কলেজের এই ব্লুবয়ের। পুলিশ আধিকারিক হিসাবে বাম আমলে মাওবাদী দমনে বিশেষ বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে। পায়ের সাথেই দুরন্ত বেগে ছুটে তাঁর কলমও। একাধিক দৈনিকে ধারাবাহিক রচনার পাশাপাশি অতি সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে তাঁর তিন তিনটি উপন্যাস। চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই সুদর্শন মানুষটি কিন্তু এ যে একেবারে নতুন ভূমিকায়। যা কিনা চমকে দিয়েছে তাঁর সহকর্মীদেরও।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃনমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা ডেবরার তৃনমূল নেতৃত্ব, ঘাটাল সংসদীয় ক্ষেত্রের সাংসদ অভিনেতা দেবের প্রতিনিধি সীতেশ ধাড়া বলেছেন, ‘ আমরা তো চমকে গেছি। স্যার গিয়েছিলেন ডুঁয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে। সেখান থেকে ফেরার পথে এই কান্ড। ঝাঁঝিয়া গ্রামের মানুষের আবদার শুনেই স্যার নেমে পড়লেন মাঠে।’ খুশি আদিবাসী রমনী পুরুষরাও। তাঁদের পরবে মন্ত্রী দিয়ে এসেছেন কিছু নগদ অর্থও। ‘আবার আসতে হবেক!’ হাসতে হাসতে প্রিয়জনকে বিদায় দিয়েছে ঝাঁঝিয়া। শনিবার, মাঘ পয়লা প্রথম দিনের সূর্য তখন পশ্চিম পাটে নামছে।