নিজস্ব সংবাদদাতা: জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা আর তাকেই দূরত্বের হার্ডেল রেসে ফেলে দিল পর্ষদ। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্র করা হয়েছে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরে এমন জায়গায় যেখানে বাস রাস্তায় যেতে গেলে দু’বার বাস পাল্টেও সরাসরি পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানো যাবেনা আর গ্রামীন পথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভাড়া গাড়ি ছাড়া পৌঁছানো অসম্ভব।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে মকরামপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের এতদিন কেন্দ্র পড়ত নারায়নগড় উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যার দূরত্ব মকরামপুর থেকে সাড়ে ৫কিলোমিটারের মধ্যে। কিন্তু এবার সেই কেন্দ্র স্থির হয়েছে আহারমুন্ডা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এই কেন্দ্রটি মকরামপুর থেকে প্রায় ২৭কিলোমিটার দূরে। বাসে গেলে একটি বাস ধরে কেশিয়াড়ী মোড়ে যেতে হবে। তারপর অন্য একটি বাস ধরে কেশিয়াড়ী রাস্তার একটি স্টপেজে নেমে ফের অন্য কোনও যান ধরে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে হবে। আর বিকল্প রাস্তা হল মকরামপুর থেকে নারায়নগড় গিয়ে গ্রামীন সড়কের মধ্যে দিয়ে প্রায় একই দৈর্ঘ্য ভেঙে যাওয়া। এ রাস্তায় টানা কোনো গনপরিবহনের ব্যবস্থা নেই। ট্রেকার ইত্যাদি চলে থাকে।
অভিভাবকরা জানিয়েছেন, ‘দুটি ক্ষেত্রেই পরীক্ষার্থীদের হাতে ৩ঘন্টা সময় নিয়ে বের হতে হবে। তারপরও যাত্রাপথ অনিশ্চিত কারন দুটি রাস্তার ওপর খড়গপুর-জলেশ্বর শাখার ট্রেন লাইন রয়েছে। বাস রাস্তায় যে লেভেলক্রসিং বন্ধ হলে ন্যূনতম ৪০ মিনিট সময় লাগবে জ্যাম কাটিয়ে রাস্তা স্বাভাবিক হতে। এই ছাত্রছাত্রীদের অধিকাংশই খুবই দরিদ্র পরিবারের। এদের আর্থিক সঙ্গতি নেই বললেই চলে। ফলে আলাদা করে পরিবারগুলির পক্ষে ভাড়া করা সম্ভব নয়। এমনকি কয়েকজন মিলেও যে গাড়ি ভাড়া করবে সেই সঙ্গতি টুকু নেই অনেকেরই। অভিভাবকদের প্রশ্ন, শুধু তো নারায়নগড় নয় মকরামপুর থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যেই ছিল ভদ্রকালী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। সেই বিষয়টাও কী করে নজর এড়িয়ে গেল পর্ষদ কর্তৃপক্ষর।
মকরামপুর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার মহান্তির দাবি, ‘এই পরীক্ষাকেন্দ্র নির্বাচনে স্কুলের কোনও ভূমিকাই থাকেনা। মাধ্যমিক পর্ষদের মেদিনীপুর আঞ্চলিক কার্যালয় থেকেই পুরো বিষয়টি নির্ধারিত হয়। পর্ষদ স্থানীয় স্কুল পরিদর্শকদের সঙ্গে আলোচনা করেন হয়ত। প্রধান শিক্ষক বলেন, ঘটনা জানার পরই ২৩শে ফেব্রুয়ারি আমি পর্ষদ এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে জানাই। আবেদন করি কেন্দ্র পরিবর্তন করার জন্য কিন্তু তাঁরা জানিয়েছেন এই মুহুর্তে কিছুই করার নেই।’ এক অভিভাবিকা জানিয়েছেন, ওই দূরত্বে ৭ দিন পরীক্ষা কেন্দ্র যাতায়াত বাবদ কয়েকজন মিলে গাড়ি ভাড়া করলেও ২ হাজার টাকা চাইছে মারুতি ভ্যান। ওই টাকা দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। পরীক্ষার্থীদের বক্তব্য যাতায়াতের ধকল সামলে পরীক্ষার ক’দিন বইয়ের পাতায় চোখ রাখাই সম্ভব হবেনা।