
নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রেম আর প্রতিহিংসার এ এক অদ্ভুদ ঘটনা। এ যেন ঘটনা নয়, সিনেমায় দেখা কিংবা গল্পে পড়া কোনও কাহিনী। রাস্তায় পরিচয় হওয়া এক যুবতীকে নিজের বোন পাতিয়ে ছিল যুবকটি কিন্তু যুবতী তাকে ভালোবেসে ফেলে ছিল প্রেমিক হিসেবেই। সে কথা সে বলেও ছিল যুবককে। কিন্তু পাতানো দাদা সেই প্রস্তাব মানেনি। ঘটনা সেখানেই থেমে যায়। এরমধ্যে যুবকের বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। বিয়ে হয়েও যায়। সেই ‘দাদা’র বিয়ের প্রীতিভোজে আমন্ত্রিত হয়ে এসে পাতানো দাদার নতুন বউকে ঠান্ডা পানীয়ের সাথে বিষ পান করিয়ে মেরেই ফেললেন সেই বোন কিংবা মনে মনে ভেবে থাকা প্রেমিকা। অন্য কোথাও নয় ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেই।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৮ই ফেব্রুয়ারি ঘটনা ঘটেছিল নন্দকুমার থানার সাওড়াবেরিয়া জালপাই ১ নম্বর অঞ্চলের রূপাহার গ্রামের বাসিন্দা বিদ্যুৎ দাস অধিকারীর বাড়িতে। সেদিন বিদ্যুৎ দাস অধিকারীর বউভাত উপলক্ষ্যে প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান এবং তারপর ফুলসজ্জা। তার একদিন আগেই তাঁর বিয়ে হয়েছে তমলুকের শ্রীরামপুরের গোপীনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা ১৮ বছরে রিয়ার। কিন্তু প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান চলাকালীনই হঠাৎই পেট আর গলায় জ্বালা নিয়ে লুটিয়ে পড়ে রিয়া। সাথে সাথে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তমলুকের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় নার্সিংহোমের তরফে তাকে কলকাতা রেফার করা হয়। কিন্তু এরপর আর শেষরক্ষা করে যায়নি। নববধূ রিয়া দাসের মৃত্যু হয়।
ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়। ময়নাতদন্তে উঠে আসে রিয়ার পাকস্থলীতে বিষের অস্থিত্ব। পুলিশ এবার তদন্তে নামে। সেদিন রূপাহার গ্রামে বিদ্যুৎ দাস অধিকারীর প্রীতিভোজ উপলক্ষ্যে কারা কারা নিমন্ত্রিত ছিল তার খোঁজ চালাতে থাকে নান্দকুমার থানার পুলিশ। বিদ্যুৎকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে করতে পুলিশের তালিকায় চলে আসে পূজা মন্ডল নামে এক যুবতীর নাম। প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ছবি, ভিডিও ফুটেজে পুলিশ দেখতে পায় কনে বেশে থাকা রিয়ার পাশাপাশি পূজার অবস্থান। পুলিশ বিদ্যুৎ ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানতে পারে যে পেশায় বাস কনডাক্টর বিদ্যুতের সঙ্গে পূজার পথেই পরিচয় হয়েছিল। এর পর পূজাকে বোন পাতান বিদ্যুৎ। কিন্তু পূজা বিদ্যুৎকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। সেকথা যুবককে জানিয়েও ছিলেন তরুণী। কিন্তু পত্রপাঠ সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন বিদ্যুৎ।
৮ ফেব্রুয়ারি বউভাতে পূজাকে আমন্ত্রণ জানান বিদ্যুৎ। সেখানে হাজির হয়ে সবার নজর এড়িয়ে ঠান্ডা পানীয়ে বিষ মিশিয়ে রিয়াকে খাইয়ে দেয় পূজা। কিছুক্ষণের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ে নববধূ। তদন্ত শুরু করে নন্দকুমার থানার পুলিশ পূজাকে গ্রেফতার করে। জেরার মুখে অপরাধ কবুল করে পূজা জানান, চোখের সামনে নিজের মনের মানুষকে অন্যের হয়ে যেতে দেখতে পারেনি সে। প্রতিহিংসার বশে চরম পদক্ষেপ নেয় সে। বউভাতের দিন নববধূ রিয়া দাসের কমল পানীয়তে বিষ মিশিয়ে দেয় পূজা। সেই পানীয় খেয়ে বমি করতে থাকে নববধূ। এরপর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত পূজা মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি তাকে তমলুক জেলা আদালতে তোলা হয়। অভিযুক্তকে ১৪ দিনের জেলা হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। প্রেম আর প্রতিহিংসার এমন মর্মান্তিক ঘটনায় হতভম্ব এলাকাবাসীরা।