
নিজস্ব সংবাদদাতা: পরিবারের দুটি সন্তান ছিল সেই দুটিকেই কেড়ে নিল বে-আইনি মোরাম খাদান। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর গ্রামীন থানার অন্তর্গত ভুকভুকিশোল গ্রামে। এই গ্রামের মামাবাড়িতে থেকেই পড়াশুনা করত দুই ভাইবোন চম্পা মান্ডি ও সৌরভ মান্ডি। ১২ বছরের চম্পা ক্লাশ ফোরে পড়ত আর তার ভাই ১০বছরের সৌরভ পড়ত ক্লাশ টু তে। বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ মামাবাড়িতে থেকে খেলতে বেরিয়েছিল পাশের মাঠে। তারপর এদের কোনও খোঁজ মেলেনি। বিকাল ৪টা নাগাদ একটি শিশুকন্যা মারফৎ পরিবারের লোক জানতে পারে বাড়ি থেকে হাফ কিলোমিটার দুরে একটি খাদানে পড়ে গেছে ওরা। গ্রামের লোকেরা যখন গিয়ে ওদের উদ্ধার করে তখন দুজনেই মৃত। ঘটনাস্থল সালুয়া লাগোয়া চামরুসাই থেকে ২কিলোমিটার দুরে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে শিশুকন্যাটি দুই ভাইবোনের খাদানে পড়ে যাওয়ার খবর দিয়েছিল সে নিজেও ওই ভাইবোনের সঙ্গে খেলতে গিয়েছিল। মোরাম খাদানের ওই অংশে পড়ে ভালো সাদা গোলাকার নুড়ি (গ্র্যাবেলস) পাওয়া যায়। খেলার জন্য সেই সাদা নুড়ি সংগ্ৰহ করছিল তারা। সেই নুড়িতে পা পড়তেই গড়িয়ে জলভর্তি খাদানে পড়ে যায় সৌরভ। হাবুডুবু খেতে থাকে। দিদি চম্পা এবং ওই মেয়েটি মিলে প্রথমে সাহায্যের জন্য চিৎকার করে। কিন্তু জায়গাটি এতটাই নির্জন ছিল যে কারুরই দেখা পাওয়া যায়নি। এরপর ভাইকে বাঁচাতে খাদানে ঝাঁপ দেয় চম্পা। সেও তলিয়ে যায় গভীর খাদানের জলে। এরপর সঙ্গে থাকা মেয়েটি ছুটে যায় হাফ কিলোমিটার দুরে গ্রামে। জানায় মানুষজনকে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, খবর পেয়েই আমরা ছুটে যাই। কিন্তু সমস্যা হল বাচ্চা মেয়েটি তখন বলতে পারছিলনা ঠিক কোন খাদানে ভাই-বোন পড়েছে। এখানে পরপর অনেক খাদান। আতঙ্কে মেয়েটি গুলিয়ে ফেলে যে ঠিক কোন খাদানে ভাই-বোন পড়েছে। এদিক ওদিক খুঁজে আমরা সেই খাদানটি অবশেষে চিনতে পারি। এরপর কয়েকজন মিলে খাদানের জলে নেমে খোঁজ করে দুজনকেই ওপরে তোলা হয় কিন্তু ততক্ষণে দুজনেই শেষ। ওদের পেটে প্রচুর জল ছিল। ওই বাসিন্দারা আরও জানিয়েছেন, জমির পর জমি জুড়ে এভাবেই ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র বে-আইনি খাদান। মোরাম তোলার পর বড় বড় গর্ত করে ফেলে দিয়ে গেছে মোরাম মাফিয়ারা। আর তারই জমা জলে ঘটে চলে এমনই দুর্ঘটনা।
কান্নায় ভেঙে পড়ে ওই দুই ভাইবোনের বাবা স্বরূপ মান্ডি জানিয়েছেন, ‘ আমি দিনমজুরির কাজ করি তাই দুই সন্তানকে চামরুসাই প্রেমানন্দ হোস্টেল স্কুলে রেখেছিলাম। লকডাউনের জন্য স্কুল ও হোস্টেল বন্ধ থাকায় ভাইবোন পাশেই মামাবাড়িতে থাকত। ওখানে থেকে টিউশন পড়ত। ওদের মাও থাকত ওদের সাথে। আমার বৃদ্ধ বাবা থাকায় তাঁকে দেখভালের জন্য আমাকে আমার নিজের বাড়ি চামরুসাইতে থাকতে হত। মাঝেমধ্যে এসে ওদের দেখে যেতাম। আর আমাদের কেউ রইলনা। আমার দুটি সন্তানকেই কেড়ে নিল ওই খাদান।’ শিশু দুটির মামা বলেছেন, আমরা অনেকবার বলেছি খাদানগুলো বোঝানো হোক, নতুন খাদান বন্ধ হোক কিন্তু কেউ শোনেনি আমাদের কথা। অনেকবার গরুবাছুর পড়ে গিয়েছে ওই খাদানে।’