নিজস্ব সংবাদদাতা: ভাবা যায়! আপনি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে পড়ে রয়েছেন রাস্তার পাশে। অথচ পাছে পুলিশি হেনস্থার শিকার হতে হয় তাই কেউ আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেনা! হ্যাঁ, শনিবার দুপুর থেকে খোদ জাতীয় সড়কে পড়ে ছিলেন এক আহত ব্যক্তি। রাতভর ওভাবেই পড়েছিলেন তিনি। সামনে একটি হোটেল ও কারখানা।

জানা গেছে ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগড় থানার কাটাইখাল সংলগ্ন জাতীয় সড়কের অংশে। লাগোয়াই প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি প্লাস্টিক দ্রব্য উৎপাদনকারী সুপ্রিম কারখানা। সেই কারখানারই প্রধান ফটক থেকে মাত্র কয়েক হাত ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক যার অদুরেই পড়েছিলেন আহত, মধ্যবয়স্ক ওই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। তাঁর মাথা ফেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসেছে। চোখমুখ ফুলে গিয়েছে।নাক দিয়ে বেরিয়ে এসেছে রক্ত। হাতে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে লেগে রয়েছে রক্তের দাগ। সংজ্ঞাহীন কিন্তু শরীরে প্রানের স্পন্দন রয়েছে। ডাকলে সাড়া দিচ্ছেননা কিন্তু হাতগুলো মৃদু কাঁপছে। রবিবার বেলার দিকে ওই ব্যক্তিকে এমনই অবস্থায় দেখতে পান কারখানার যুবক কর্মচারী দেবব্রত সাহু ও তাঁর কয়েকজন সহকর্মী। তাঁরাই খবর দেন পুলিশকে। এরপরই পুলিশ এসে আ্যম্বুলেন্সে ওই ব্যক্তিকে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
দেবব্রত জানিয়েছেন, খবর নিয়ে জানতে পারি শনিবার বিকেল থেকেই পড়ে রয়েছে ওই ব্যক্তি। দেবব্রতকে সামনের হোটেলের লোকেরাও বলেছে যে তারা শনিবার দুপুর থেকেই ওই ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখেছে। কিন্তু পাছে আইনি জটিলতায় পড়তে হয় সেই ভয়ে কেউ আসেনি। দেখেছেন পথ চলতি মানুষ, বাস, লরি, প্রাইভেট গাড়ির লোকেরাও। এমনকি এলাকার বাসিন্দারাও। কিন্তু না কেউ এগিয়ে আসেননি। কেউ বলেছেন পাগল, কেউ ভিখিরি, ভবঘুরে। যেন পাগল, ভিখিরি কিংবা ভবঘুরেরা মানুষ নয়, তাঁদের চিকিৎসা হয়না।
প্রশ্ন উঠছে জাতীয় সড়কে কী পুলিশও টহল দেয়না? তাঁদেরও নজরে পড়েনি! জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষেরও গাড়ি টহল দেওয়ার কথা বিপজ্জনক অবস্থায় পড়া যাত্রী কিংবা দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি উদ্ধারের জন্য। কারুরই নজরে পড়লনা? আইনজীবীরা বলছেন, ‘মানুষের অজ্ঞতা থেকেই এই ভয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পরিস্কার বলা রয়েছে কোনও দুর্ঘটনাগ্রস্ত কিংবা আহত ব্যক্তিকে কেউ হাসপাতালে নিয়ে গেলে পুলিশ ওই সাহায্যকারী ব্যক্তিকে ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনও মামলায় জড়াতে পারবেনা। এমনকি হাসপাতালকেও ওই ব্যক্তি তাঁর নাম ঠিকানা বলতে বাধ্য নয়। হাসপাতাল তাঁর নাম পরিচয় জিজ্ঞাসাও করতে পারেনা, তাঁকে পুলিশ না আসা অবধি আটকে রাখতে পারবেনা। সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইভের প্রচার চলার সময় পুলিশের উচিৎ মানুষকে জানানো এই বিষয়গুলি।’