নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বাঁকুড়ায় স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসে গিয়ে মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে এসেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের গৃহবধূ লক্ষী তুঙ্গ। কিছুদিনের মধ্যেই জানতে পারলেন মেধা তালিকার ২৪৯ নম্বরে নাম রয়েছে তাঁর। মহিলাদের মধ্যে তিনি ৬৯ নম্বরে! মোট শুন্য পদ যেখানে ৩৯৫৬ আর উত্তীর্ণ তালিকা প্রকাশ হয়েছে ৩৫০২ জনের তখন লক্ষীর চাকরি আটকায় কে? হলদিয়া কন্যা লক্ষীর হাত ধরে তখন নন্দীগ্রামের মনোহরপুর গ্রামের তুঙ্গ পরিবারে লক্ষী লাভের আশা। কিন্তু লক্ষী অবাক! বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত প্যানেল স্থগিত করে দিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। ২০১৭ সাল থেকে দৌড়াচ্ছেন লক্ষী। দৌড়াচ্ছেন বাঁকুড়া, কলকাতা।

লক্ষী যখন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করা চাকরির জন্য দৌড়াচ্ছেন তখন কিছু আত্মীয়, প্রতিবেশী তাঁকে নিয়ে মজা, ঠাট্টা করেছেন। তাঁদের কারও কারও হাতে সেই স্থগিত হওয়া প্যানেলের নিয়োগপত্র! কেউ কেউ পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, এই সরকারের আমলে চাকরির পরীক্ষায় পাশ করে চাকরি হয়না, চাকরি হয় টাকায়! অবাক লক্ষী দেখলেন, সত্যি সত্যি যাঁরা চাকরি পেয়েছেন তাঁদের পাশ করার মত জায়গাই ছিলনা। লক্ষী জানান, ” এরপর কলকাতায় এক ব্যাক্তির সাথে দেখা হল তিনি আমাকে বেশ কিছু কাগজপত্র তুলে দিলেন। দেখলাম যাঁরা চাকরি পেয়েছেন তাঁদের সবারই নিয়োগপত্র ২০ মার্চ ২০২০ সালের। এঁদের অনেকেরই তালিকার অনেক নিচে নাম ছিল। অবাক হলাম যে তালিকা স্থগিত সেই তালিকায় চাকরি হচ্ছে ভেতরে ভেতরে! ২০২২ সালে
২২ নভেম্বর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে মামলা দায়ের করলাম। ২৪ শে নভেম্বর শুনানি শুরু হয়। তারপর আজ অবশেষে বিচার পেলাম।”
উল্লেখ্য শিল্প শহর হলদিয়ায় বাপের বাড়ি লক্ষীর। বাবা বন্দরের স্থায়ী কর্মী হওয়ায় স্বচ্ছলতায় কেটেছে প্রাক বিবাহিত জীবন কিন্তু বিয়ের পর সংসারে অনটনের শুরু। স্বামী সরকারি দপ্তরের চুক্তি ভিত্তিক কর্মী। সংসারে একটু স্বচ্ছলতা আনতে কিছু একটা করার কথা ভাবছিলেন যখন তখনই ২০১৬ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিজ্ঞাপ্তি দেখতে পান। নাইন পাশ করে আর পড়া হয়নি কিন্তু এই আবেদন করা যায় এইট পাশ করলেই। তারপর আবেদন, পরীক্ষা আর তালিকায় নাম। ১৪ মাস লড়াই শেষে বৃহস্পতিবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্যনেল বাতিল করেছেন। শুক্রবার সেই রায়ের ভিত্তিতে চাকরিতে যোগ দেওয়া ১৯১১জনের নিয়োগ বাতিল করেছে রাজ্য সরকার।
যাঁদের চাকরি গেল তাঁদের জন্য কষ্ট হচ্ছে? ৩২ বছরের গৃহবধূ লক্ষী তুঙ্গ জানালেন, ” কারও চাকরি যাক এটার জন্য আমি লড়িনি। চেয়েছি প্রকৃত যোগ্যরা চাকরি পাক। মানুষ যখন আমাকে বলত, এই সরকারের আমলে যোগ্যতার কোনোও দাম নেই। খুব কষ্ট হত। দিনের পর দিন অযোগ্যদের চাকরি করতে দেখেছি। ওদের কেউ কেউ আমাকে দেখে হাসত। খুব কান্না পেত আমার। রাতের পর রাত কাঁদতাম!” আজ তবে কাঁদছেন কেন? জয়ের পরও। ” কাঁদছি এক পা এগোতে পেরেছি বলে। এটা জয় নয়, জয় হবে সেদিন যেদিন আমি চাকরি পাবো, সমস্ত যোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পাবেন।”