
নিজস্ব সংবাদদাতা: একবার নয়, পরপর দু’বার অকাল বৃষ্টি! মাস দেড়েক আগেই ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে জেরবার হয়েছিলেন দক্ষিণবঙ্গের আলু চাষিরা। সেই ধকল কাটিয়ে ফের জমিতে আলু পুঁতে সেই অকাল বৃষ্টিতেই মার খেল দ্বিতীয়বারের চাষ। পরিণামে আত্মহত্যা করলেন এক কৃষক। এমনটাই দাবি করেছে পরিবার। ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা-১ ব্লকের গোয়ালতোড় থানার লক্ষ্মণপুর গ্রামে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত চাষির নাম দেবাশিস মান্না (৫০)। শুক্রবার রাতে বাড়ির রান্না ঘরে গলায় ফাঁস নিয়ে ঝুলতে দেখেন বাড়ির লোকজন। রাতেই প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় উদ্ধার করে দ্বারিগেড়িয়া হাসপাতালে নিয়েগেলে, চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ।
পরিবারের দাবি, প্রথমবার অকাল বৃষ্টিতে আলু নষ্ট হওয়ার পর দ্বিতীয়বার ফের ঋণ সংগ্ৰহ করে চার বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছিলেন মান্না। কিন্তু বৃহস্পতিবার ব্যাপক বৃষ্টি এবং তার সঙ্গে ভারী শিলায় নষ্ট হয়ে গেছে আলুর ক্ষেত। এই মানসিক আঘাত সহ্য করতে পারেননি দেবাশিস মান্না। শুক্রবার আলুর ক্ষেত পর্যবেক্ষণ করে আসার পর থেকেই চুপচাপ হয়ে গেছিলেন। ওই দিন রাতেই সবার অলক্ষ্যে গলায় দড়ি দেন তিনি। যদিও জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, আমরা কোনও স্যুইসাইড নোট পাইনি যা থেকে আত্মহত্যার প্রকৃত কারন বলা যায়। মৃতদেহ ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে।
পরিবারের এক সদস্য জানিয়েছেন, মোটামুটি মধ্যবিত্ত পরিবার দেবাশিস মান্নার। মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন কিছুটা ধারদেনা করেই। পাশাপাশি ছেলেকে মেল নার্সিং পড়ানোর জন্য বিশাখাপত্তনমে একটি বেসরকারি কলেজে ভর্তি করেছেন। তিন বছর ধরে ছেলে পড়ছে। সেখানেও অনেক টাকা খরচ করতে হচ্ছে। পরিকল্পনা ছিল চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করে সঙ্কট কাটিয়ে উঠবেন। প্রথম বার ঘূর্ণিঝড়ের অভিঘাত কাটিয়ে পূর্ন উদ্যোমে দ্বিতীয় বার ফের মহাজনি ঋণ নিয়ে আলু লাগিয়েছিলেন। কিন্তু এবার শিলাবৃষ্টি সেই ভাবনাতে আঘাত হানল। আর এসব কারনেই মানসিক অবসাদ থেকে আত্মহত্যা বলে পরিবারের দাবি। যদিও আত্মহত্যার পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে কিনা তা এখনই পরিষ্কার নয়।
উল্লেখ্য ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের জেরে আলুর ক্ষতি হওয়ায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনাতেও এক কৃষক আত্মহত্যা করেছিলেন। জেলা জুড়ে দাবি উঠেছিল কৃষি ঋণ মুকুব করার। বিভিন্ন কৃষি সমবায় ঘিরে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন কৃষকরা। যদিও সরকারি তরফে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তার আগেই ঘটে গেল আরও একটি আত্মহত্যার ঘটনা।