Wednesday, March 27, 2024

Paschim Medinipur: জঙ্গল মহলে লাল ধুলো উড়িয়ে লাল সুনামী! “যাহা ছাপ্পান্ন তাহাই নবান্ন”শ্লোগান তুলে লালঝান্ডার তলায় সামিল হলেন কয়েক’শ তৃনমূল ও বিজেপি সমর্থক পরিবার

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ: পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে লাল সুনামীর ঢেউ দেখল জঙ্গল মহল। তৃনমূল আর বিজেপি ছেড়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে লাল পতাকার তলায় সামিল হলেন কয়েক’শ তৃনমূল ও বিজেপি কর্মী সমর্থক পরিবার। পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গল মহল বলে পরিচিত গোয়ালতোড় থানার  মাকলি এলাকার মোট ২৯ টি গ্রামের ১৭ টি বুথ এলাকা থেকে কয়েক’শ মানুষকে শুক্রবার সামিল হতে দেখা গেল দীর্ঘ ৯ কিলোমিটার পদযাত্রায় সামিল হতে। দেখা যায় কতারে কাতারে মানুষ ট্র্যাক্টর, ম্যাটাডোরে করে হাজির হন পেড়ুয়াবাঁধ এলাকায়। তারপর সেখান থেকে মিছিল শুরু হয় ৯ কিলোমিটার দূরে মাকলি বাজার অবধি।

মিছিলে উপস্থিত কেশিয়া গ্রামের এক আদিবাসী ভূমিহীন কৃষক জানান, ” ২০০৯ সাল থেকে এই এলাকায় শুরু হয় মাওবাদী ও তৃনমূলের যৌথ সন্ত্রাস। খুন করা হয় মোট ৪৮ জন সিপিএম নেতা কর্মীকে। অজিত ঘোষ থেকে জীতেন হাটুই রক্তে লাল হয়ে যায় সবুজ জঙ্গল মহল। ২০১১ সালে ভোট গণনার পরই রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজাতে বাজাতে শুধু গোয়ালতোড় এলাকাতেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় গরীব ১১ হাজার পরিবারের বাড়ি। মাও-তৃনমূল যৌথ সন্ত্রাসীদের চাপে লাল ঝান্ডা ছেড়ে তৃণমূলে যেতে বাধ্য হয় মানুষ। কিন্তু এক পঞ্চায়েতেই শুরু হয় তৃনমূলের ব্যাপক লুটপাট।”

মাকলি গ্রামের এক ব্যাক্তি জানান, “গত পঞ্চায়েতে তৃনমূল কংগ্রেসকে হটিয়ে আমরা গেরুয়া দল বিজেপি কে ক্ষমতায় আনি। ভেবেছিলাম এরা বোধহয় গেরুয়াধারি সন্যাসীদের মতই আত্মত্যাগী আর সৎ। গত পঞ্চায়েত ভোটে ১০টা বুথে জিতে বিজেপি মাকলি গ্রামপঞ্চায়েত চালাবার দায়িত্ব পায়। কিন্তু হায় হরি! এরা দেখলাম ভিতরে ভিতরে ভাগ বাঁটরা করেই তৃণমূল মিলে মিশে লুঠ চালায়। আড়াই বছর পর আবার তৃণমূলের প্রধান হয়। এখন আবাস যোজনা দূর্নীতি নিজেদের মধ্যে ভাগ বাঁটরা করে কাটমানি নিয়েই তালিকা করে। খোয়াব ভাঙতে দেরি হলনা আমাদের। দেখলাম নরেন্দ্র মোদীর ৫৬ ইঞ্চি আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবান্নের মধ্যে কোনও ফারাক নেই। সবাই লুটেরা, সবাই ডাকাত।” জানালেন মিছিলে অংশগ্রহণকারী এক মহিলা।

স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, ” আবাস যোজনায় দুই শাসকদলের মিলেমিশে ভাগ বাঁটরা করে স্বজন পোষন,  কাটমানি নিয়ে বরাদ্দ পাওয়া, একশ দিনের কাজে সীমাহীন জালিয়াতি ও লুঠের কারনে এমন রুক্ষ মাটিতে রুজি রুটি সংকটে ঘরে ঘরে পরিযায়ী শ্রমিক তৈরী হয়েছে। কৃষির সেচের ডিপটিউবল গুলি অকেজো হয়ে পড়েড়ে আছে দীর্ঘ আট নয় বছর ধরে।  কেশিয়া মৌজা, ছোটো মাকলি, পেড়ুয়াবাঁধ এমন তিনটি মৌজায় সেচের ডিপটিউবল বসানোর বরাদ্দের টাকা তৃণমূল ও বিজেপি মিলেমিশে লুঠ করে সেই কাজ সম্পূর্ণ না করে ফেলে রেখেছে। তাই আমরা আবার ফিরছি লালঝান্ডার তলায়। আগামী পঞ্চায়েতে ওই দুই দলকেই হটাতে হবে।”

এই মিছিলে পা মিলিয়ে সিপিএম জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ বলেন, “কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আর রাজ্যের তৃণমূল সরকার আসলে নাম দুটা আলাদা হলেও দুই ফুলই একই নীতি নিয়ে জনগনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে। জিনিস পত্রের আকাশ ছোঁয়া দাম, কৃষির সার, কীটনাশক বীজ সবেতেই আড়াই গুন দাম বেড়েছে, আর এরাজ্যে তাতেও কালোবাজারি সহ ফড়েদের হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। কৃষক ফসলের দাম না পেয়ে ঋণের জালে সর্বশান্ত হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, ” তৃনমুল দূর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ওদের মন্ত্রী নেতারা জেলে, কয়লা গরু পাচার কান্ডে জেলে গেছে বীরভূমের সন্ত্রাসের নায়ক ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সব পঞ্চায়েত দখলকারী নেতা অনুব্রত। টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির কারনে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ মহামান্য আদালতের। এই চুরি জালিয়াতির  মাথা কে জেলে ভরার আন্দোলন লাল ঝান্ডার মানুষরাই করছেন।আর বিজেপি তৃণমূল কে আবার তৃনমুল বিজেপিকে একে অপরকে অক্সিজেন দিয়ে বামপন্থী দের দূর্বল করতে গোপন বোঝাপড়া করেই চলছে। এই দুই দূর্নীতিবাজ শাষকদল কে জনবিচ্ছিন্ন করে জনগনের পঞ্চায়েত গড়ার যে লড়াই সংগ্রাম শুরু হয়েছে তাতে আপনাদের এক জোট হয়ে সেই লড়াইকে বুথে বুথে, পাড়ায় পাড়ায় উঠানে সংগঠিত করার আহ্বান জানান।” জানা গেছে সমর্থকদের পাশাপাশি বিজেপি ছেড়ে ২৬ জন নেতা সিপিআইএম এর আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য উপস্থিত হয়। বিজেপি দলের মাকলি অঞ্চল কমিটির দুই সম্পাদক স্বপন দে, অমর দে, এবং অঞ্চল যুব মোর্চার সম্পাদক মুন্না খান সহ বুথ স্তরের আরোও ২৩ জন সামিল হোন সিপিআইএম এর কর্মসূচিতে।

- Advertisement -
Latest news
Related news