নিজস্ব সংবাদদাতা: রাত পোহালেই গায়ে হলুদ কন্যার। আর তার কয়েকঘন্টার পরেই বাজবে সানাই, বসবেন বিয়ের পিঁড়িতে। তার ২৪ঘন্টা আগেই রক্তদানের অভিনব বাসর সাজালেন পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর শহরের এক কন্যা।

অঙ্কিতা খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নার্স হিসাবে যোগ দেন ২০১৯ সালে। রোগী বিভাগে কাজ করার পর এখন হাসপাতালের ব্লাডব্যাংকেই কর্মরতা। অঙ্কিতার এই অনন্য ভাবনাকে স্বার্থক করতে তাই এগিয়ে এসেছেন ব্লাড ব্যাঙ্কের সহকর্মী, চিকিৎসক ও অন্যান্যরা। ব্লাডব্যাঙ্কের দায়িত্ব প্রাপ্ত চিকিৎসক আধিকারিক ডঃ ঝুমা মুখার্জী অঙ্কিতার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানকে ঘিরে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার উদ্যোগ নজর পড়ছে বিভিন্ন জায়গায় কিন্ত খড়গপুর শহরে এই প্রথম। আমাদের ভালো লাগছে আমাদেরই একজন সহকর্মী এই ভাবনা ভেবেছেন। এই কাজ যদি আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করে তবে আমরা রক্তের সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারব।
অঙ্কিতার বাবা অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মচারী সুগম বিশ্বাস বলেন, ‘ দেখুন বিয়ে বাড়ি, অনুষ্ঠান বাড়ি হয়, মানুষ আসেন চলে যান এটাই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু আমার মেয়ের ইচ্ছা ছিল একটু অন্যরকম ভাবে এই আনন্দের মুহূর্তকে উদযাপন করার। এরপর ও যখন এই প্রস্তাব নিয়ে এল তখন আমরা খুবই উৎসাহের সঙ্গে মেনে নিলাম। এই উদ্যোগ আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ জীবনকে আরও সুন্দর করে তুলুক এটাই প্রার্থনা করি।
এই উদ্যোগগে একই ভাবে আনন্দিত অঙ্কিতার আত্মীয় স্বজনরা। বিয়ের মত পবিত্র একটি অনুষ্ঠানে রক্তদানের পবিত্রতা মিশে যাওয়ায় খুশির হাওয়া তাঁদের মধ্যেও। অঙ্কিতার কাকা সুজিত বিশ্বাস, মামা রবিন কুমার সেন জানিয়েছেন, আমরা আপ্লুত যে আমাদেই বাড়ির মেয়ে এই ভাবে ভেবেছে। এই প্রজন্ম এভাবেই এগিয়ে আসুক।
অঙ্কিতা নিজে জানিয়েছেন, ‘ আমার অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল একটা নতুন কিছু করার। মাঝখানে অতিমারি চলে আসায় তা সম্ভব হয়নি। এরপর আমি ব্লাডব্যাংকে দায়িত্ব নিয়ে আসি। এখানেই আমার মনে হল আমরা যখন মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করে থাকি তখন নিজেরাই এমন একটা কিছু করে ফেলি। আমার সহকর্মীরাও আমাকে অনুপ্রাণিত করেন। সবার সহযোগিতায় এই কাজটা সম্ভব হল। এমনি অনুষ্ঠান করে বিয়ে তো কতই হয়! আমি একটু অন্যভাবে ভাবলাম।’ তবে একটু আফসোসও রয়ে গেছে অঙ্কিতার। নিজেও রক্তদান করতে গেছিলেন কিন্তু রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকায় তাঁর রক্ত নেওয়া যায়নি।