নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রথম কর্মী সভাতে তৃনমূল প্রার্থী রমেশ আগরওয়াল বলেছিলেন, ‘আমার বহুদিনের ইচ্ছা ছিল জনগনের সেবা করার। ভগবান মুখ তুলে তাকিয়েছেন, টিএমসি আমাকে টিকিট দিয়েছে।’ উপস্থিত কর্মীরা ঢোঁক গিলেছেন প্রার্থীর এই বক্তব্যে। কারন ‘ভোটে জিতলেই জনসেবা আর না জিতলে নিজের সেবা’ এই থিওরিতে তৃনমূলের কর্মীরা মোটামুটি রপ্ত হয়ে গেলেও প্রকাশ্যে বলতে বাধো বাধো ঠেকে। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে রমেশ আগরওয়াল সেই কথা বলেই ফেলেছেন।

কিন্তু তৃনমূল কর্মীদের কাছে সমস্যা আরও একটা জায়গায়। ব্যবসায় ‘ব্যস্ত’ রমেশ আগরওয়াল শুরুতেই আবার কর্মীদের বলে দিয়েছেন, প্রচার টচার কর্মীদেরই করতে হবে। উনি কেবল সন্ধ্যার দিকে ২ঘন্টা সময় দিবেন। কর্মীরা বলছেন, নিজের প্রচারেই যিনি দিনে মাত্র ২ঘন্টা সময় দিতে পারবেন তিনি জেতার পর কেমন জনসেবক হবেন?
রমেশ আগরওয়ালের দোষ নেই। দু’দুটো ব্যবসা সামলাতে হয় তাঁকে। একটা রেশন দোকান বা এম.আর.শপ আর অন্যটা বাংলা মদ ‘বিন্দাস’ ব্র্যান্ড উৎপাদনের। পিঙ্কন, টারজন, উড়ান, বাংলা নম্বর ওয়ানের মতই এখন বাংলা মদের বাজারে ‘বিন্দাস’ ব প্রচুর কাটছে। এ হেন লক্ষীকে তো আর অবহেলা করা যায়না। খড়গপুর শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে গ্রামীন খড়গপুরের একটি জায়গায় ‘বিন্দাস’ মদের কারখানা। প্রতিদিনের উৎপাদন ও সরবরাহ ঠিকঠাক বজায় রাখতে রমেশ আগরওয়ালকে সময় দিতেই হয় তাই প্রচার আর জনসেবায় একটু সময় কম পড়বেই।
সেটা অবশ্য তিনি পুষিয়ে দিচ্ছেন টাকায়। ফ্ল্যাগ ফেস্টুন ব্যানার হোর্ডিংয়ে খরচ করছেন প্রচুর। কর্মীদেরও খাওয়া দাওয়া হাত খরচেও খামতি নেই। কিন্তু তবুও মন ভালো নেই ভালো কর্মীদের। ভাড়াটে নেতাকে বওয়ার যন্ত্রনা অনেক। এমনিতেই রেশন দোকান থেকে মালপত্র বন্টন নিয়ে এলাকায় বিস্তর ক্ষোভ তার ওপর ‘বিন্দাস’ কাঁটাও বিঁধছে।
ওয়ার্ড থেকে গতবার বিজেপির হয়ে জিতেছিলেন লক্ষ্মী মুর্মু। লড়াইটা সেবার হয়েছিল কংগ্রেস প্রার্থী বি. কলাবতীর সঙ্গে। খুব সামান্য ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন লক্ষ্মী। লড়াই হয়েছিল কংগ্রেস বনাম বিজেপির। তৃনমূল এখানে কোনও ফ্যাক্টর হয়নি এবারও ফ্যাক্টর নয়। কিন্তু ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারত লক্ষ্মী মুর্মুকে দাঁড় করালে। বিজেপির হয়ে জেতার পরই তৎকালীন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের নেতৃত্বে যে কয়েকজন বিজেপি কাউন্সিলরকে হাইজ্যাক করে তৃণমূলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁদের মধ্যে লক্ষ্মী মুর্মু একজন।
ব্যক্তিগত ভাবে সৎ, দুর্নীতির কালিমাহীন দু’দুবারের জেতা এই মহিলাকে এবার প্রার্থী করেনি তৃনমূল। ‘কাজের বেলায় কাজী আর কাজ ফুরোলেই পাজি’ র মতই লক্ষ্মীকে প্রার্থী করেনি তৃনমূল। তাই লক্ষ্মীর নিজস্ব ভোট তৃনমূলে যায়নি। প্রথমবার সিপিআই থেকে জয়ী হয়েছিলেন। পরেরবার সিপিআই প্রার্থী না করায় বিজেপি থেকে দাঁড়িয়ে সিপিআইয়ের ভোট নিয়ে গেছিলেন বিজেপির ঘরে। লক্ষ্মীর ঝুলিতে থাকা ভালো অংশের আদিবাসী উপজাতি ভোট এবার কংগ্রেস প্রার্থী কলাবতীর দিকেই যাক, চাইছেন লক্ষ্মী।তাঁর বাড়িতে প্রচারে আসা কংগ্রেস প্রার্থীর জয় কামনা করেছেন তিনি। ফলে লড়াই এবারও কংগ্রেস বনাম বিজেপির। বিজেপির প্রার্থী অভিষেক আগরওয়াল। ফলে, তৃনমূল কংগ্রেস প্রার্থী রমেশ আগরওয়ালের সমাজসেবার ইচ্ছা হয়ত অধরা থেকেই যাবে।