নিজস্ব সংবাদদাতা: লড়াই হাড্ডাহাড্ডি আর তার মধ্যে গোঁজ দাঁড়িয়ে সেই লড়াইকে আরও কঠিন করে দিয়েছে বিজেপির জন্য। যে গোঁজ বিজেপির নিশ্চিত জয়কে অনিশ্চিত করে দিয়েছে। খড়গপুর শহরের ২৫নম্বর ওয়ার্ড বা কৌশল্যা সংলগ্ন এলাকায় জন্মলগ্ন থেকে খাতা খুলতে পারেনি শাসকদল তৃনমূল কংগ্রেস। একদা বাম ওয়ার্ড বলে পরিচিত এই ওয়ার্ডে গত ২দশক আধিপত্য করে যাচ্ছে বিজেপি তার মধ্যে টানা ১৫বছর এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিজেপি নেত্রী বেলারানী অধিকারী।

বর্তমানে আসনটি তফসিলি জাতি মহিলার জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় টিকিট পাননি বেলারানী কিন্তু তাতে আফসোস নেই তাঁর, আফসোস তাঁর সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই এই ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে দল আর তাতেই ফোঁস করেছেন বেলা। বুধবার মনোনয়নের শেষ বেলায় নিজে প্রার্থী নির্বাচন করে তাঁকে নিয়ে গিয়ে মনোনয়ন জমা করিয়েছেন এই বিজেপি নেত্রী। আর তাতেই সঙ্কটে বিজেপি।
২৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি এবার প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন এই ওয়ার্ড থেকে খড়গপুরে প্রথম বিজেপি প্রার্থী হিসাবে জয়ী হওয়া প্রাক্তন কাউন্সিলর গৌতম ভট্টাচার্যর বৌদি মামনি গোলদার কে। অন্যদিকে বেলার বাজি নমিতা দাস। তৃনমূল এখানে দাঁড় করিয়েছে আশা দোলাইকে অন্যদিকে কংগ্রেসের প্রার্থী বিজয়া বিশোই। লড়াইয়ের ময়দানে এই ৪ প্রার্থীরই শক্তি যথেষ্ট বেশি। মামনির শক্তি এই ওয়ার্ডে বিজেপির টানা জয়, আশার শক্তি শাসকদলের প্রার্থী হিসেবে। বিজয়া শিক্ষিতা ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির জন্য ইতিমধ্যেই আলোচনার বিষয়বস্তু। অন্যদিকে নমিতার শক্তি বেলারানী অধিকারী ও এলাকার সমাজসেবী বলে পরিচিত অশোক দাস।
অনেকের মতে অশোক দাসই নমিতার আসল শক্তি কারন বেলারানী অধিকারীর হয়ে এলাকা উন্নয়নের কাজ গুলি তিনিই করতেন। তাছাড়া বারোবেটিয়া সংলগ্ন বস্তি, কৌশল্যা জেলেপাড়া বস্তি ও সিলিভার জুবলী স্কুল লাগোয়া বস্তি সহ এলাকার হতদরিদ্র গরিব মানুষগুলির ওপর অসীম প্রভাব রয়েছে অশোক দাসের। সে প্রভাব এতটাই জোরালো যে ২০১৫ সালে তৃনমূলকে খড়গপুর পৌরসভা পাইয়ে দেওয়ার মরিয়া চেষ্টায় ভোটের ঠিক আগেই অশোক দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তৎকালীন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের নির্দেশে কিন্তু তারপরও বেলারানীকে হারানো সম্ভব হয়নি। বলা বাহুল্য বিজেপির শক্তি এখানে অশোক দাসই। নমিতা দাস এখানে যতটা না বেলার প্রার্থী তার চেয়েও বেশি অশোক দাসের প্রার্থী। ভোটের ময়দানে তাই শেষ অবধি নমিতা দাস টিকে গেলে বিজেপির কপালে শনি নাচবেই।
বেলার অভিমান বা ক্রোধের জায়গাটি মর্যাদার প্রশ্নে। ২০১৫ সালে পুলিশের বহু চেষ্টা স্বত্ত্বেও সংখ্যা গরিষ্ঠতা জোটাতে পারেনি তৃনমূল। এরপরই পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের দ্বিতীয় দফার খেলা শুরু হয়। সেই খেলা ছিল দল ভাঙানোর। মামলা, জেল, টাকা এবং চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এই খেলা শুরু হয়। ৫ বিজেপি কাউন্সিলর ও ২ বাম কাউন্সিলর দখল করতে সক্ষম হন পুলিশ সুপার। এঁদের মধ্যে বেলারানীও ছিলেন যদিও চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের ক্ষমতা ছেড়ে দ্রুত দলে ফিরে আসেন তিনি। বেলার অভিমান, যিনি চাইলে শাসকদলে থেকে যেতে পারতেন, ক্ষমতা পেতে পারতেন তা না করে দলে ফিরে আসার মাশুল তাঁকে এই ভাবে গুনতে হবে যে এলাকার প্রার্থী নির্বাচনে তাঁকেই গুরুত্ব দিলনা দল! বেলা পরিস্কার জানিয়েছেন, আমি এখানে প্রার্থী হতে পারবনা জানা কথাই কিন্তু যে কর্মীকে আমরা নিজের মতো করে কাজ শেখালাম, এলাকায় পরিচিত করলাম তাকে কেন দাঁড় করানো গেলনা? ১৫বছরের কাউন্সিলরকে যারা গুরুত্ব দেয়না তারা কী আদৌ দলটাকে জেতাতে চায় নাকি অন্য দলের হাতে ওয়ার্ডটাকে তুলে দিতে চায়?