নিজস্ব সংবাদদাতা : শেষ অবধি রোগের চাপে হলদিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন মাদুলিবাবা সৈয়দ আবদুল কাদের। রোগ সরানোর জন্য মাদুলি বিক্রি করতেন মাদুলি বাবা কিন্তু পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানোয় নিজেই রোগে কাবু। ফলে আধুনিক চিকিৎসার সুবিধা নিতে প্রকাশ্যে আসা ছাড়া গতি ছিলনা। এদিকে প্রকাশ্যে আসলেই পুলিশ গ্রেফতার করবে।

ফলে অনেক ভেবে চিন্তে এবং নিজের আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে আদালতে আত্মসমর্পনের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সোমবার হলদিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন জানালে সংশ্লিষ্ট বিচারক তাঁকে আপাততঃ ৩দিনের জন্য জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২৭ জানুয়ারি ফের তাকে আদালতে হাজির করা হবে বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী।
সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন করোনা সরানোর অব্যর্থ নিদান হিসাবে মানুষকে ভাঁওতা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ ওই মাদুলিবাবার বিরুদ্ধে ভারতীয় অপরাধ দমন আইনে ড্রাগস এন্ড ম্যাজিক রেমিডি বা জাদু মারফৎ রোগ সরানো, আপত্তিকর বিজ্ঞাপন ও প্রতারনার মামলা রুজু করা হয়েছে।
উল্লেখ্য হলদিয়ার সুতাহাটার রামচন্দ্রপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিজের বাড়িতে, ‘গলায় মাদুলি ঝোলান, আর করোনা থেকে সেরে উঠুন’ -এমন বিজ্ঞাপনী প্রচারে বুজরুকি কারবার চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। মাদুলি কেনার হিড়িকও পড়ে গিয়েছিল।
জানা গেছে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার থেকে সর্বনিম্ন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল মাদুলি। বিশেষ করে এলাকার গরিব, অশিক্ষিত ও ধর্মান্ধ মানুষের ঢল নেমেছিল ওই মাদুলি কেনার জন্য। পীর পাগম্বরের স্বপ্নাদৃষ্ট সেই মাদুলির কাটতিও ছিল ব্যাপক।
বিষয়টি নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ না থাকায় প্রকাশ্যে এই বুজরুকি চললেও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছিল না পুলিশ। এরপর বিষয়টি নিয়ে সরব হন বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা। অভিযোগও দায়ের করা হয়। ঘটনায় নিন্দায় সরব হতে দেখা যায় চিকিৎসকদেরও। তারপরই অভিযান চালায় পুলিশ। মামলা রুজু করে শুরু হয় পুলিশি তল্লাশি। সেই থেকেই গাঢাকা দিয়েছিলেন মাদুলিবাবা।
সূত্র মারফৎ জানা গেছে বেশ কয়েকদিন গা ঢাকা দেওয়ার পর আর লুকিয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছিলনা তাঁর পক্ষে। সত্তরোর্ধ্ব বয়স হওয়ায় শরীরে বাসা বেঁধেছে বেশকিছু রোগ ব্যাধি। এসবের জন্য নিয়মিত ওষুধ খেতে হত তাঁকে। মাদুলি বেচে সেই সব ঔষধের পাশাপাশি উঠে আসত ভালমন্দ খাদ্য গ্রহনের পাশাপাশি পথ্য সেবনের টাকাও। কিন্তু মাদুলি বেচা বন্ধ হওয়ায় টান পড়েছে রসদে। অন্যদিকে পুলিশের ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকায় মানসিক উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকায় সুগার, প্রেসারও চড়চড়িয়ে উর্ধমুখী। এসব যে মাদুলিতে সারেনা তা তাঁর চেয়ে আর কে বেশি জানে? বাধ্য হয়ে আইনজীবীর পরামর্শে সোমবার আইনজীবীর সাথেই আদালতে হাজির হন মাদুলিবাবা। জেলে থাকলে চিকিৎসাটা তো হবে!