নিজস্ব সংবাদদাতা: মদ, গাঁজা কিংবা ব্রাউনসুগারের অন্ধকারে তলিয়ে গেছিলেন এঁরা! কেউ পাঁচ বছর, কেউ আবার আট-দশবছর! সংসার, পরিবার পরিজন, আত্মীয় বন্ধুবান্ধব এবং সমাজের চোখে হয়ে উঠেছিলেন দাগী নেশাড়ু। দেওয়ালে পিঠ ঠেকতে ঠেকতে তারপর একদিন আলোয় ফেরার লড়াই শুরু করেছিলেন এঁরা।

খড়গপুর শহরের কৌশল্যায়, বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের বিপরীতে ‘খড়গপুর রেসকিউ ফাউন্ডেশন’ য়ের উদ্যোগে হয়ে গেল এমনই একটি অভিনব রক্তদান শিবির। যদিও এটাই প্রথম নয়, গত ৬ বছরে এরকমই ৭টি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল ‘খড়গপুর রেসকিউ ফাউন্ডেশন।’ ৬ বছরে ৭টি কেন? উত্তরে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার স্বাগত খাঁড়া জানান, ‘ করোনা কালে লকডাউনের বছরে রক্তসঙ্কট তীব্র হয়েছিল তাই ওই বছর ২টি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিলাম। রক্ত দিতে এগিয়ে এসেছিলেন নেশা মুক্তরাই।’ কিন্তু এই ব্যতিক্রমী ভাবনা কেন? উত্তরে স্বাগত বলেন, ‘ নেশার অন্ধকার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসার পর সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষগুলোর মধ্যে একটা অনুতাপ কাজ করতে থাকে। সেই অনুতাপ সমাজকে ঠকানোর, পরিবারকে বিপর্যস্ত করা, প্রিয় মানুষটিকে বঞ্চিত করা ইত্যাদি ইত্যাদি। তাঁরা তখন সমাজের জন্য ভালো কিছু করার তাগিদ অনুভব করতে থাকেন। সমাজকে কিছু দিতে চান। তাঁদের সেই আর্তি মেটানোর জন্যই এই আয়োজন।’
স্বাগত খাঁড়ার এই দাবি মানছেন সমাজ বিজ্ঞানীরাও। অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা মানুষগুলোকে সমাজ কী ভাবে গ্রহণ করছে সেটার ওপরেও নির্ভর করে এই আলোয় ফেরার লড়াইটা। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, নেশামুক্ত হয়ে ফিরে আসা মানুষদের যদি সমাজ স্বাভাবিক ভাবে নিতে না পারে তা’হলে কোনোদিন কেউ নেশামুক্ত হতে চাইবেনা, পারবেও না। এই যে নেশামুক্ত মানুষগুলি রক্ত দিচ্ছেন এর অর্থ কী? একজন বা দুজন চিকিৎসক রয়েছেন, একটি ব্লাড ব্যাঙ্ক সেই রক্ত গ্রহণ করছে। গ্রহণ করছে এই রক্ত অন্যের জীবন বাঁচাতে পারবে বলেই। এটাই হচ্ছে স্বীকৃতি। এটাই হচ্ছে ওই মানুষদের প্রতি সমাজের বার্তা যে, তোমাদেরও সমাজের প্রয়োজন। এটাও লড়াইয়ের শক্তি।
এদিন যে ৪৬ জন রক্ত দিয়েছেন তার মধ্যে ২২জনই ছিলেন নতুন রক্তদাতা। স্বাগত জানিয়েছেন এটা আমাদের একটা বড় পাওনা যে, রক্তদানের ভীতি কাটিয়ে এই যে ২২জন নতুন রক্ত দিলেন এর অর্থ সমাজ আগামী দিনের জন্য ২২জন স্থায়ী রক্তদাতা পেলেন। খড়গপুর রেসকিউ ফাউন্ডেশনের এই সামাজিক উদ্যোগ নতুন কিছু নয়। লকডাউনের সময় খড়গপুর শহরে আটকে পড়া ৬৩০জন মানুষকে টানা ৪৬ দিন দু’বেলা রান্না করা খাবার সরবরাহ করেছিল। সেলসের কাজ করতে এসে বিহার, ওড়িশা, ঝাড়গ্রাম, ছত্তিশগড় ও এই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আটকে পড়েছিলেন ওই ৬৩০ জন যুবক। খড়গপুর পুলিশ, প্রশাসনও সাহায্য করেছিল এই সংস্থাকে। আর প্রতিদিন দু’বেলা রান্না এবং পরিবেশনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন এই আলোয় ফেরা মানুষেরাই।