নিজস্ব সংবাদদাতা: বিজেপির ৪ বুথ সভাপতি নিয়ম করে তৃনমূলের ঝান্ডা নিয়ে ঘুরছে। গত ৪ দিনে ১০জন বিজেপি কর্মী যোগ দিয়েছে তৃনমূলে। ওয়ার্ড থেকে জয়ী বিদায়ী কাউন্সিলর প্রচারেই নামছেননা আর বিজেপির ওয়ার্ড সভাপতি রাজ্য ছেড়ে বসে আছেন ভিন রাজ্যে! গনতান্ত্রিক পশ্চিমবঙ্গে সবারই গণতান্ত্রিক অধিকার আছে তাই ওয়ার্ড সভাপতিরও অধিকার আছে ভোটের সময় ভিন রাজ্যে যাওয়ার আর প্রাক্তন কাউন্সিলরের প্রচারে না নেমে ঘরে বসে থাকার। খড়গপুরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে এমনই গণতন্ত্র! নাকি গোটা খড়গপুরেই?
খড়গপুর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি সভাপতি অশোক দাস। ওয়ার্ডে দেখা নেই। দাদা কোথায়? ফোন নম্বরে ফোন করতে জানা গেল দাদা ভুবনেশ্বরে। তো বেড়াতে গেলেন যদি পুরী না গিয়ে ভুবনেশ্বর কেন? অশোক দাস জানালেন, ‘বেড়াতে আসিনি দাদা। পুলিশের ভয়ে পালিয়ে আছি। পুলিশ বলেছে, ভোটের দিন অবধি খড়গপুর শহরে থাকা যাবেনা।’

অশোক দাস জানিয়েছেন, ‘ তারপর পুলিশ বলল, হয় শহর ছাড়ো নয় জেলে চলো। যদি ভোট পর্যন্ত ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে না ঢোকো তাহলে কোনও ভয় নেই। তো গতবারও আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ আটকে রেখেছিল। ভাবলাম বাইরে যখন থাকতেই হবে তখন পুলিশের ঘরে কেন থাকব তার চেয়ে ভুবনেশ্বরই ভালো। তাছাড়া চাপ নেই দাদা, ৫ বছর আমি মানুষের জন্য কাজ করি, ভোটের সময় কাজ করবে মানুষই। আমি বরং একটু রেস্ট নিয়ে নেই। যা করবার জনতাই করবে। আগেও করেছে, এবারও করবে।
বিজেপির ৩ বারের জেতা কাউন্সিলর বেলারানী অধিকারী ঘর থেকেই বের হচ্ছেননা। কেন হচ্ছেননা জবাবও দিচ্ছেননা। তবে কর্মীরা বলছেন, ‘পুলিশের হুমকি, পুলিশ বলেছে বাইরে বের হলেই বৌদির ছেলেকে গাঁজা কেসে ঢুকিয়ে দেবে। সেই আগের বার যেমনটা হয়েছিল।’ আগের বার কী হয়েছিল? ২০১৫ সালে তৃনমূল মাত্র ১১টি আসন পায় খড়গপুর পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে। সেই সময় ৫ বিজেপি কাউন্সিলরকে ভাঙিয়েছিলেন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। তখন অবশ্য ভারতী ঘোষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মা বলতেন। তো সেই সময়ও বিজেপির যে ৫ জনকে ভাঙানো হয়েছিল তারমধ্যে বেলারানী আধিকারীও ছিলেন। অভিযোগ তখনও তাঁর ছেলেদের ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে তৃনমূল বোর্ডকে সমর্থন দিতে বাধ্য করে পুলিশ।
তো বিজেপির বুথ সভাপতিদের হাতে তৃনমূলের ঝান্ডা কেন? এখানেও নাকি সেই গাঁজা কেস! ঘরে পুরিয়া গুঁজে দিয়ে গ্রেফতার করা হবে। সুতরাং ঝান্ডা না ধরে উপায় কী? যদিও তাতেও আতঙ্ক কাটছেনা তৃনমূলের। এখানে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন মামনি গোলদার। খড়গপুর বিজেপির প্রাক্তন শহর সভাপতি তথা ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির ২২ বছর আগের জেতা প্রার্থী গৌতম ভট্টাচার্যর বৌদি এই মামনি গোলদার। গৌতমের আমল থেকেই এই ওয়ার্ডে অপরাজেয় বিজেপি। বর্তমান হালচাল সম্পর্কে গৌতম জানালেন, ‘ এটাই তো প্রচার দাদা। সব্বাই সবকিছু দেখছে। মানুষ বুঝে যাচ্ছে তৃনমূলের চেহারা। মানুষই লড়ে নেবে ভোট। কেন অশোক দাস শহরে নেই, কেন বেলা অধিকারী বাড়িতে বন্দি আর কেন বিজেপি কর্মীদের হাতে তৃনমূলের ঝান্ডা তার জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি রয়েছে কৌশল্যা, বারবেটিয়া, বুলবুলচটি। শুধু ২৭ তারিখ আসতে দিন।’ ভুবনেশ্বরে থেকেই অশোক দাস বলেছেন, ‘এই বিধানসভাতেও ১১০০ভোটে লিড আছে আমাদের। নেতাদের সরিয়ে দিলেও মানুষকে সরানো যাবে কী?’
পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। স্থানীয় পুলিশ পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে, একটি মামলার খোঁজ খবর নিতে অশোক দাসকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার ছিল। সেই জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার পরই তাকে সসম্মানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর সে কোথায় তা পুলিশ কী করে জানবে? বিজেপি কর্মীদের হাতে তৃনমূলের ঝান্ডা প্রসঙ্গেও পুলিশের সাফ বক্তব্য, কোনও দলের কর্মী যদি অন্য দলে যায় তাতে কার কী করার আছে? তাছাড়া এখনতো দলে দলে বিজেপি কর্মীরা তৃনমূলে আসছে তাইনা? এত গণতন্ত্র পশ্চিমবাংলা ছাড়া কোথায় পাওয়া যাবে?