নিজস্ব সংবাদদাতা: এ যেন রীতিমত হাইজ্যাক করে নিয়ে যাওয়া! হৈচৈ শুনে বাড়ির দরজা খুলে দাঁড়াতেই হুড়মুড়িয়ে উঠোনে ঢুকে পড়ল প্রায় ২৫০জন তৃনমূল কর্মী। তারপর প্রায় কাঁধে তুলে পার্টি অফিসে ছুটল দলীয় কার্যালয়ে।

প্রার্থী ঘোষণার পরই ক্রোধে ফেটে পড়েছিলেন ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড তালবাগিচার তৃনমূল নেতা কর্মীরা। প্রায় হাজার খানেক কর্মী সমর্থক রাস্তায় ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখাতে শুরু করেন, চলে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ। ২৪ঘন্টার মধ্যেই তাঁরা নিজেদের প্রার্থী বেছে নিলেন। ৩৫নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর জয়া পালকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রার্থী ঘোষণা করে দিলেন তাঁরা। ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃনমূল যুব সভাপতি রাজীব ব্যানার্জী বলেছেন, ‘ মঙ্গলবারই বৌদিকে নিয়ে গিয়ে নমিনেশন জমা দিচ্ছি আমরা। তারপরই শুরু হচ্ছে দেওয়াল লিখন। ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড তৃনমূলের ২০ বছরের জেতা ওয়ার্ড। এলেবেলে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে এই ওয়ার্ড আমরা হারাতে চাইনা।’ কিন্তু দল যে অন্য প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে? উত্তরে রাজীবের জবাব, কলকাতা থেকে খড়গপুরের কর্মীদের পালস বোঝা যায়না।’
উল্লেখ্য জয়া পাল ২০১০-২০১৫ এই ৩৫নম্বর থেকেই জয়ী হয়েছিলেন তৃনমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে। পাশের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন খড়গপুর তৃনমূলের বর্ষীয়ান নেতা তথা পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর জহরলাল পাল। সম্পর্কে জয়া পাল তাঁর পুত্রবধূ। ২০১৫ সালে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ফিরে আসেন জহরলাল পাল কিন্তু ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড তফসিলি সংরক্ষিত হওয়ায় জয়া পাল দাঁড়াতে পারেননি। জহরলাল ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী করেন দলীয় কর্মীর স্ত্রী কবিতা দেবনাথকে। কবিতা হারেন, ৩৩ হাতছাড়া হয়। এবার ফের ৩৩ নম্বরে ফিরেছেন জহরলাল পাল। রাজ্য কবিতা দেবনাথকে প্রার্থী করেছে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে কিন্তু দলীয় কর্মীরা হেরো প্রার্থীকে মানতে নারাজ। তাঁরা চেয়েছিলেন জহরলালের অপর পুত্রবধূ গোপাকে প্রার্থী করতে। কিন্তু গোপা খড়গপুর শহর তৃনমূল যুব সভাপতি অসিত পালের স্ত্রী। দলীয় অনুশাসনের বাইরে যেতে নারাজ অসিত। শেষ অবধি কর্মীরা দাঁড় করালেন প্রাক্তন কাউন্সিলর জয়াকেই।
জয়া কিংবা জয়ার স্বামী কেউই সরাসরি রাজনৈতিক সম্পৃক্ত নন। জয়ার স্বামী অমিত একটি মুদী দোকান চালান। বাবা কিংবা দাদার পথে হেঁটে রাজনীতি করেননি। থাকেনও আলাদা। ফলে কোনও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা নেই তাঁদের। আর সেটাকেই অস্ত্র করেছেন ওয়ার্ডের তৃনমূল কর্মীরা। ওয়ার্ডের তৃনমূলের যে ৩০০জন সক্রিয় কর্মী রয়েছেন তার প্রায় পুরোটাই নেমে পড়েছেন জয়ার হয়ে। ভোটের কাজও পরিচালিত হচ্ছে পুরানো কার্যালয় থেকেই। তৃনমূলের নামে দখল করা দেওয়ালই এখন জয়ার দেওয়াল আর মঙ্গলবার পুরানো কার্যালয় থেকেই মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছেন কর্মীরা। যাকে বলে পুরো তৃনমূলটাই এখানে হাইজ্যাক হয়ে গেছে।