শশাঙ্ক প্রধান : গ্রাম পঞ্চায়েতের সাধারণ সভা চলাকালীন এক পঞ্চায়েত সদস্যের ঘাড় ধরে থানায় নিয়ে গেল পুলিশ! ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়লেন অন্যান্য পঞ্চায়েত সদস্যরা।

জানা গেছে মঙ্গলবার গ্রামপঞ্চায়েতের কার্যালয়ে একটি সাধারণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী এই সভায় পঞ্চায়েত সদস্যরা নিজ নিজ সংসদ এলাকার সমস্যা গুলি তুলে ধরেন। আলোচনা হয়ে রাস্তা, জল, বিদ্যুৎ ইত্যাদি পরিষেবার মত বিষয়গুলি। বরাদ্দ অর্থে কোথায় কি কি কাজ করা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আলোচনা হয় সংসদ এলাকায় বকেয়া প্রকল্প কিংবা না হওয়া প্রকল্প নিয়েও। এই সভাতেই বক্তব্য রাখছিলেন ডেবরা পশ্চিম সংসদের সদস্য সমীর সিং বেদী ওরফে সোনু। বক্তব্য রাখার সময় তিনি বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন প্রধান রেখা হুই এর সাথে।
পঞ্চায়েত সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, সিং বক্তব্য শেষ করার ৫ মিনিটের মধ্যেই পুলিশ এসে পৌঁছায় এবং কে সমীর সিং বেদী জানতে চায়। প্রধান ইশারায় সমীরকে দেখিয়ে দিলেই ডেবরা থানার এক পুলিশ আধিকারিক তাঁর কলার ধরে টেনে হিঁচড়ে অফিস থেকে বের করে নিয়ে সোজা ডেবরা থানায় নিয়ে চলে যায়। উপস্থিত সদস্যরা জানিয়েছেন ঘটনাটি যেন চোখের পলকে ঘটে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুরো বিষয়টি হয়। উপস্থিত পঞ্চায়েত সদস্যরা ঘটনায় স্তম্ভিত ও হতবাক হয়ে যান সাময়িকভাবে। এরপরই তাঁরা মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে যান এবং থানায় চলে যান সমীর সিং বেদীকে কেন তুলে নিয়ে যাওয়া হল তা জানতে?
ডেবরা থানায় উপস্থিত এক পঞ্চায়েত সদস্য খোকন মুদি জানান, ‘একজন ক্রিমিনালকে যেভাবে পুলিশ তুলে আনে ঠিক সেইভাবেই সিংকে তুলে আনা হয়েছে। এক আধিকারিক তাঁর কলার ধরেছেন, বাকি পুলিশকর্মীরা তাঁর কোমরে ধরেন। ঠেলতে ঠেলতে গাড়িতে তোলা হয় তাঁকে। তারপর তাঁকে হাজতে ভরে দেওয়া হয়। একটি সভা চলাকালীন পঞ্চায়েত অফিস থেকে পুলিশ কী ভাবে একজন সম্মানিত পঞ্চায়েত সদস্যকে তুলে আনতে পারে? এই গোটা ঘটনার পেছনে রয়েছেন আমাদের প্রধান। তিনি কোনোও বিরুপতা, বিরোধিতা সহ্য করতে পারেননা। তাঁর কথাই কথা। নিজের মনমর্জিতে সমস্ত কাজ করেন, কোনও আলোচনা ছাড়াই।’
রাতেই অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয় ওই পঞ্চায়েত সদস্যকে। সমীর সিং বেদী জানিয়েছেন, আমার এলাকা ডেবরা পশ্চিম সংসদের অবস্থা খুবই খারাপ। এলাকায় রাস্তাঘাটের অবস্থা বেহাল। অনেকদিন ধরেই বরাদ্দ নেই। আমি নিজের এলাকার জন্য বরাদ্দ দাবি করেছিলাম। বলেছিলাম বঞ্চনার কথা। সেই নিয়ে প্রধানের সঙ্গে কিছু উচ্চবাচ্য হয় কিন্তু উনি যে গোপনে ফোন করে পুলিশ ডাকবেন সেটা বুঝতে পারিনি। প্রধান রেখা হুই জানিয়েছেন, সভায় মদ্যপ অবস্থায় হাজির হয়েছিলেন ওই সদস্য। ওনার আচার আচরণে একজন মহিলা হিসাবে নিরাপত্তার অভাববোধ করেছিলাম তাই পুলিশকে খবর দেই।’
পুলিশ জানিয়েছে, প্রধানের ফোন পেয়েই তাঁরা গেছিলেন। ওই সদস্যের বিরুদ্ধে এর আগেও নানা দুষ্কর্মের অভিযোগ রয়েছে। এলাকায় মদ্যপ হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে। একজন মহিলা প্রধানকে নিরাপত্তা দিতেই সরিয়ে আনা হয়েছিল ওই সদস্যকে। এদিকে প্রধানের বিরুদ্ধে ডেবরা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সমস্ত সদস্যই অভিযোগ পাঠিয়েছেন বিডিও, থানার কাছে। অবিলম্বে ঘটনার বিহীত না হলে প্রধানের বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।