শশাঙ্ক প্রধান: করোনা স্থায়ী হবেনা। কোনও মহামারীই মানুষের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়নি। করোনাও তাই বিদায় নেবে একদিন। কিন্তু ক্ষতি করে যাবে এমন কিছু যদি না মানুষ সচেতন হয়। আর সেই ক্ষতির অন্যতম হল শৈশবের মধ্যে স্কুলে আসার আগ্রহ ও অভ্যাসকে নষ্ট করে দেওয়া আর বহু শৈশবকে প্রাথমিক শিক্ষার অঙ্গন থেকে বের করে দেওয়া।

পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা ব্লকের জোতহাড়ো জ্ঞানাদাময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্যোগে এভাবেই পড়াশোনা শুরু হয়েছে চলতি মাসের প্রথম থেকে। শিশুশ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ৪৫ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে পালা করে ক্লাস চলছে। সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত প্রতিদিন এক একটি ক্লাসের পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস চলছে গাছের তলায়। গাছের তলায় আসন পেতে ওই ক্লাস চলে। ওই পাঁচদিন ক্লাস নিচ্ছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর মাইতি ছাড়াও ২ সহ-শিক্ষক অরুপ ভর্ট্টাচার্য ও শ্যামপদ টুডু। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বাংলা, ইংরাজি, অঙ্ক সহ বিভিন্ন বিষষের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর মাইতি বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির জন্য প্রাথমিক স্কুল বন্ধ থাকায় শিশু পড়ুয়াদের পড়াশোনার খুবই ক্ষতি হচ্ছে। অনেক পড়ুয়া পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তাদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। অভিভাবকরা আমাদের কাছে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করতেন স্কুল কবে খুলবে। সেই অভিভাবকদের সংগে আলাপ আলোচনা করেই আমরা স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে পড়াশোনা চালু করেছি। আমার সহ শিক্ষকরাও সহযোগিতা করছেন।’’ তিনি জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী স্কুলে পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস করায় নিষেধ রয়েছে। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে স্কুলের কাছে এই খোলা মাঠে আসন পেতে ক্লাস করা হচ্ছে।করোনা সতর্কতা বিধি মেনেই শিক্ষক থেকে পড়ুয়া সবাই মাস্ক পরে আসছে। প্রতিটি ক্লাসের অধিকাংশ পড়ুয়াই হাজির হচ্ছে।’’
ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির যুক্তি ‘‘করোনা পরিস্থিতির জন্য স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুদের পড়াশোনার খুব ক্ষতি হচ্ছে। অভিভাবকদের তরফে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনুরোধ করেছিলাম করোনা বিধি মেনে যাতে পড়ুয়াদের পড়াশোনা চালু করা যায়। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এগিয়ে আসায় বিকল্প উপায়ে পড়ুয়াদের পড়াশোনা চালু করা গিয়েছে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের যৌথ উদ্যোগেই এভাবে পড়াশোনা সম্ভব হচ্ছে।’’ অভিভাবক রুমা দাস বলেন, ‘‘ সবার পক্ষে বাড়িতে বাচ্চাদের পড়ানো সম্ভব হয়না। তাছাড়া বাড়ির পড়ানো কখনও স্কুলের পড়ানোর বিকল্প হতে পারেনা। স্কুল তো শুধু পড়ানোর জন্য নয়, খেলা ধুলো প্রকৃতি পাঠ এসব কী বাড়িতে পাওয়া যায়? আর এসব ছাড়া শৈশব তো যান্ত্রিক। আমরা চাইছিলাম সপ্তাহে অন্তত একদিন স্কুলে পড়াশোনা হোক। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম। শিক্ষক-শিক্ষিকরা এগিয়ে আসায় আমরা খুশি।’’
ওদিকে দীর্ঘদিন পড়ার পাশাপাশি খেলার মাঠও পেয়ে গেছে খুদে পড়ুয়ার দল। পড়ার পাশাপাশি চলছে দৌড় ঝাঁপ আর খেলাও। সেদিকেও নজর রাখছেন শিক্ষকরা। তাঁরা জানিয়েছেন পড়ার পাশাপাশি বড় হওয়ার জন্য এটাও জরুরি। পড়ার সাথে সাথে মন আর শরীরের বিকাশের জন্য স্কুল।