নিজস্ব সংবাদদাতা: ‘দুয়ারে মদ’ প্রকল্প চালু থেকে আর কয়েক পা মাত্র দুরে রয়েছে সরকার। মদ বিক্রীর এই লক্ষীলাভের পেছনে গ্রাম থেকে শহরে কী পরিমাণ মূল্য দিতে হচ্ছে গরিব থেকে মধ্যবিত্ত মানুষকে কয়েকদিন আগে তারই মর্মান্তিক স্বাক্ষী হয়েছিল খড়গপুর গ্রামীন থানার কৃষ্ণপুর গ্রাম।

যেখানে মদ্যপ বাবার হাতে মার খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক যুবকের। এবার সেই স্বাক্ষী সেই পশ্চিম মেদিনীপুরেরই বেলদা থানা এলাকার একটি গ্রাম। যেখানে এক ৩৫ বছর বয়সী সিভিক ভলান্টিয়ারের আত্মহত্যা নিঃস্ব করে দিয়ে গেল বৃদ্ধ বাবা-মা এবং স্ত্রী ও ৪ বছরের শিশুকন্যাকে। ঘটনাটি ঘটেছে বেলদা থানার তরুয়া গ্রামে শুক্রবার বিকালে।
পুলিশ জানিয়েছে মৃত ওই যুবকের নাম চিন্ময় শাসমল। চিন্ময় কাজ করত খড়গপুরে অবস্থিত রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের (CID) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সদর দফতর খড়গপুর শহরে। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, বছর ছয়েক আগে বিয়ে হয়েছিল চিন্ময়ের। তাঁর ৪ বছরের শিশুকন্যা রয়েছে।
বছর তিনেক হল মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন চিন্ময়। আর তারই জেরে বাবা-মা সহ ৫জনের সংসারে নেমে এসেছিল অশান্তির কালো ছায়া। নিত্যদিনের অশান্তিতে জেরবার ছিল পরিবাররটি। আর এই অশান্তির জেরে বেশ কয়েকবার আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি কিন্তু শেষমেশ সফল হলেন শুক্রবার।
চিন্ময়ের স্ত্রী জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ফের মদ খেয়ে অশান্তি শুরু করেছিলেন স্বামী। আমাকে মারধরও করে। রাতের মত ঘটনা শেষ হয়ে গেলেও সকালে ফের অশান্তি শুরু হয়। চিন্ময়ের স্ত্রীর কথায়, ‘মেয়ের সামনে মারধরের পাশাপাশি উনি আমার গলায় কাপড় দিয়ে ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এক ফোঁটা মেয়ের সামনে নিত্যদিনের এই অশান্তি আর ভালো লাগছিলনা। তাই মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেছিলাম। তারপর সন্ধ্যাবেলায় এই খবর পাই।’
চিন্ময়ের স্ত্রী হাহাকারে ফেটে পড়ে বলেছেন, মদের নেশা কেটে গেলেই মানুষটা অন্যরকম। আমাকে, মেয়েকে নিয়ে কত স্বপ্নের কথা বলতেন। আমিও অপেক্ষায় থাকতাম একদিন উনি বেরিয়ে আসবেন মদের নেশা থেকে। আমাদের প্রথম দিনগুলো আবার ফিরে আসবে। কিন্তু মদই শেষ করে দিল সব।
চিন্ময়ের তরুয়া গ্রামের প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, এই হাহাকার শুধু চিন্ময়ের পরিবারে নয়। তরুয়া ছাড়াও আশেপাশের গ্রাম গৈতা, খালিনা, ইশবপুর, বীরবলপুর, বাসুটিয়া, আমলপুর, পচাসবেটিয়া, তুতরাঙা সহ সমস্ত গ্রামের একের পর এক পরিবারে এই অশান্তির কালো ছায়া। চোখের সামনেই রাতারাতি বদলে যাচ্ছে ছেলেগুলো। কালকের লাজুক কিশোরকে আজ দেখা যাচ্ছে চোখ লাল করে তাকাতে। নেশা করে শুধু বউ পেটানো নয়, বৃদ্ধ বাবা-মার গায়েও হাত তোলার ঘটনা ঘটে আকছার।
এক ব্যক্তি আক্ষেপ করে বলেন, ‘ সরকার দুয়ারে মদ পৌঁছানোর আগেই আমাদের দুয়ারে মদ পৌঁছে গেছে। আমাদের কাছাকাছি বড় বাজার ঠাকুরচক। ওখানে পাঁচ ছ’টা পানের দোকানে মদ বিক্রী হয়, সবাই জানে। আমাদের গ্রাম থেকে কয়েকপা দুয়ারে সরকার অনুমোদিত মদের দোকান হয়েছে। ঠাকুরচক থেকে খাকুড়দা আর বেলদা বাইপাস সড়ক বরাবর ডজন খানেক ধাবার প্রত্যেকটিতেই প্রায় মদ বিক্রী হয়। এরপরও রয়েছে চোলাই মদের সুলভ কারবার। কুড়ি টাকার পাউচ। আমাদের ছেলেদের নেশার ফাঁদে ফেলার এত আয়োজন! আমার আপনার ক্ষমতা কোথায় এই ফাঁদ থেকে ঘরের ছেলেদের মুক্ত করি?’