নিজস্ব সংবদাদাতা: তাঁর ওপরেই ভরসা করেছিলেন খড়গপুর সদর বিধায়ক অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন দুঃস্থদের শীতবস্ত্র বিতরণের আয়োজন করার। বিধায়ক নির্ভরশীলতার সেই খুঁটিকেই সরিয়ে দিল দল। বহিস্কার করা হল খড়গপুর তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিজেপি নেত্রী তৃষা চাকলাদারকে।
খড়গপুর শহর বিজেপির এক মন্ডল সভাপতির বিরুদ্ধে সরাসরি শ্লীলতাহানি ও খুনের চেষ্টার অভিযোগ এনেছিলেন তৃষা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তারও হন উত্তর মন্ডল সভাপতি দীপসোনা ঘোষ। সেই ঘটনার মাস খানেকের মধ্যেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বহিস্কার করা হল এই নেত্রীকে।
তাঁকে যে বহিস্কার করা হয়েছে এটা স্বীকার করে তৃষা বলেছেন, ‘ শহরের কিছুদিন আগে সাংসদের ছবি সম্বলিত ব্যানার ঝোলানো হয়েছিল। ওই ব্যানারে অনেকের ছবি থাকলেও শহরের বিধায়কের ছবি ছিলনা। বিষয়টি নীতি বিরুদ্ধ মনে হওয়ায় আমি তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট করেছিলাম। আমাদের রাজ্যনেত্রী অগ্নিমিত্রা পল আমাকে তার জন্য ক্ষমা চাইতে বলেন। আবেগের বশে কাজটা হয়ত ঠিক হয়নি তাই তাঁর কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলাম কিন্তু তারপরও কেন আমাকে বহিস্কার করা হল বুঝতে পারছিনা।’ এরপরই তাঁর কটাক্ষ, ‘অবশ্য এখন তো সারা রাজ্য জুড়েই পুরানো নেতা কর্মীদের বিজেপি বহিস্কার করছে। এ আর নতুন কী?’
উল্লেখ্য খড়গপুর শহর বিধায়ক হিসাবে হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের নির্বাচিত হয়ে আসার পর থেকে খড়গপুর শহরে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। গোটা শহর বিজেপি কর্মী সমর্থক এমনকি নেতারাও আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গেছেন সাংসদ দিলীপ ঘোষ বনাম বিধায়ক হিরন চট্টোপাধ্যায় শিবিরে। শুধু তাই নয় বিধায়ক বা সাংসদ পরস্পরকে এড়িয়ে চলেন। আর তারই মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল দিলীপ ঘোষ অনুগামীদের টাঙানো ব্যানার যেখানে বাদ দেওয়া হয়েছিল বিধায়ক হিরণের ছবি। ওই প্রসঙ্গে হিরণের কটাক্ষ ছিল, যাঁরা ছবিতে থাকেন তাঁরা ভোট করাননা। ভোট করান সাধারণ কর্মীরা। সম্প্রতি পুরভোটের প্রস্তুতি নিয়ে শহর বিজেপির সাংসদ বাংলোতে ডাকা মিটিং এড়িয়ে যান হিরণ।
এরপর হিরণের আরও একটি কটাক্ষ রাজ্য বিজেপিকে তীব্র অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। দলের সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষের ‘গরুর দুধে সোনা তত্ত্ব’কে কটাক্ষ করে হিরণ বলেন, গরুর দুধে সোনা খোঁজার চাইতেও বাংলার বেকার যুবকদের চাকরির ব্যবস্থা করাটা এখন খুব প্রয়োজন।’ বলাবাহুল্য তা হজম করা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়ে রাজ্য বিজেপির পক্ষে। এরই পাশাপাশি হিরণকে নিয়ে আরও একটি বড় সমস্যা হল খড়গপুর শহরে জয়ী হবার পর থেকে হিরণ যে সমস্ত পরিষেবামূলক কাজ করে চলছেন সেখানে দলীয় ব্যানার ব্যবহার প্রায় করাই হয়না। সেই সব কাজে দলের কট্টর নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নতুন এবং অপরিচিত মুখকেই বেশি প্রাধান্য দেন। যেমনটা ডিসেম্বর মাসে শীতবস্ত্র প্রদান অনুষ্ঠানে করেছিলেন।

ওই অনুষ্ঠানে এলাকার মন্ডল সভাপতি দীপসোনা ঘোষের পরিবর্তে তৃষা চাকলাদারদের দেওয়া হয়। অভিযোগ এই অনুষ্ঠান বন্ধ করার জন্য তৃষা চাকলাদারকে হুমকি দেন ঘোষ। তৃষা সেই নিষেধাজ্ঞা মানেননি। অনুষ্ঠান হয়েছিল এবং হিরণ উপস্থিত ছিলেন। হিরণ চলে যাওয়ার পরই হামলা হয় তৃষা এবং তার ভাই সহ হিরণ অনুগামীদের ওপর। থানায় অভিযোগ হয় এবং মন্ডল সভাপতি গ্রেপ্তার হন। সেই সময়েও হিরণ তৃষার পক্ষেই দাঁড়ান। দীপসোনা জানান, পৌর নির্বাচনকে ঘিরে এই রকম অনেক পরিস্থিতিই হতে চলেছে। বলাবাহুল্য দীপসোনার ইঙ্গিত ছিল পুরসভায় টিকিট পাওয়া নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের। এখনও সেটাই চলছে বলেই মনে করা হচ্ছে। পুরসভায় দলের টিকিট কারা পাবে সেটাই এখন দুই গোষ্ঠীর মাথা ব্যথা। আর সেই মাথা ব্যথার মধ্যেই বিজেপির রাজ্য কমিটি তৃষাকে বহিস্কার করে হিরণ গোষ্ঠীকে ১ গোলে পিছিয়ে রাখল।