নিজস্ব সংবাদদাতা: বেসরকারি মেসের নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের প্রতিবাদ করায় রান্না বন্ধ করে দিয়েছে মেস কর্তৃপক্ষ। আর তার ফলে দিনভর খাবার জোটেনি এমনই অভিযোগ তুলে আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur) ক্যাম্পাসের ভেতরে ধর্ণায় বসেছেন প্রায় ৫৫০জন পড়ুয়া। প্রথমে লালবাহাদুর শাস্ত্রী ছাত্রাবাসের সামনে ধর্ণায় বসার পর ওই পড়ুয়ারা বর্তমানে হল ম্যানেজমেন্ট কমিটির কার্যালয়ের সামনে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ জানাচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা এই ঘটনায় আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur) কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করছে। যদিও এদিন গভীর রাত অবধি ঘটনাস্থলে কর্তৃপক্ষর তরফে কারুরই উপস্থিতি ঘটেনি বলেই জানা গেছে। বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের দাবি যে বেসরকারি কোম্পানি ওই মেস চালানোর দায়িত্বে রয়েছে তারা অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করছে। বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁরা এর প্রতিবাদ করে আসছিলেন। এই নিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে বচসা হয় মেসের ম্যানেজার এবং কর্মীদের। এরপরই মঙ্গলবার সকাল থেকে রান্না বন্ধ করে দিয়েছে ওই মেস কর্তৃপক্ষ। ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকে পড়ুয়ারা লাঞ্চ বা ডিনার কোনোটাই করতে পারেনি।
উল্লেখ্য আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur) ক্যাম্পাসে এই মুহূর্তে ১৮টি ছাত্রাবাস রয়েছে যার মধ্যে ৮টি ছাত্রাবাসের খাবার পুরোপুরি বেসরকারি সংস্থা চালিয়ে থাকে। ২টি ছাত্রাবাস আধাসরকারি এবং বাকী ছাত্রাবাসগুলি আইআইটি কর্তৃপক্ষর অধীনে হল ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি পরিচালনা করে থাকে। করোনা অতিমারীর সময়ে সরাসরি পঠনপাঠন বন্ধ থাকায় প্রায় সাড়ে ৯হাজার পড়ুয়ার বেশিরভাগই বর্তমানে বাড়িতে থেকে অনলাইনে পড়াশুনা করছেন। প্রায় ১৪০০মত পড়ুয়া এই মুহূর্তে ক্যাম্পাসে রয়েছেন। এঁদের মধ্যে কিছু রিসার্চ স্কলার, কিছু নিজের বাড়িতে থেকে ভালো নেটওয়ার্ক পাননা, কিছু ফাইনাল ইয়ারের ল্যাবরেটরি ওয়ার্ক ইত্যাদি রয়েছেন। এই ১৪০০পড়ুয়ার জন্য এই মুহূর্তে ২টি বেসরকারি মেস চালু রয়েছে যার মধ্যে একটি লালবাহাদুর শাস্ত্রী ছাত্রাবাসে চলে থাকে। এই মেসটি চালায় এ.কে. হসপিটালিটি নামে একটি সংস্থা।
ওই সংস্থার তরফে পড়ুয়াদের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলা হয়েছে, যেখানে একেকটি ছাত্রাবাসে তিন থেকে পাঁচ হাজার পড়ুয়া মেসগুলিতে খেতেন সেখানে বর্তমানে ৩০০ জনও খাননা। কিন্তু ওই একই পরিমান কর্মী, ম্যানেজার, পরিকাঠামো নিয়ে মেস চালাতে হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই খাবারের দাম বাড়ছে। পূর্বে যেখানে ১১২ থেকে ১১৫ টাকায় (উদাহরণ মাত্র) চার বেলার খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হত এখন তা ২২৪ থেকে ২৩০ টাকা পড়ে যাচ্ছে। এখন পড়ুয়ারা যদি দাবি করে যে বেশি টাকা নিয়ে আগের মতই খাবার দেওয়া হচ্ছে সুতরাং বেশি টাকা তারা দেবেননা তা’হলে মেস চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। পড়ুয়ারা এটা বোঝা স্বত্ত্বেও প্রতিদিনই বচসা সৃষ্টি করছে যার ফলে একটা সংঘর্ষের পরিবেশ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়েই মেস বন্ধ করেছেন তাঁরা।
এ.কে হসপিটালিটির তরফে আরও জানানো হয়েছে, ‘ এরপরও পড়ুয়াও যে পরিমান পড়ুয়া মেসের খাবার গ্রহণ করবে বলে তাঁরা এই প্যানডেমিক সময়েও মেস চালু করেছিলেন সেই পরিমান পড়ুয়াও খাবার খাচ্ছেননা। তারা অন্য কোথাও খাবার খেয়ে নিচ্ছেন। স্বাভাবিক অবস্থায় কিছু পড়ুয়া খাবার না খেলেও চলে যেত কারন কিছু নির্দিষ্ট খরচ সব পড়ুয়াদের মধ্যে ভাগ হয়ে যেত বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হচ্ছেনা। কোনও কোনও দিন প্রচুর খাবার অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে। এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।’
এদিকে পড়ুয়াদের দাবি মেস কর্তৃপক্ষ দ্বিগুনেরও বেশি অর্থ নিচ্ছে অথচ দিনের পর দিন খাবারের মান নিম্ন হচ্ছে। এই নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলেই বাজে ব্যবহার করছে মেসের ম্যানেজার ও কর্মীরা। তাঁদের আরও অভিযোগ বিষয়টি নিয়ে বারংবার হল ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো স্বত্ত্বেও তাঁরা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আর তারফলে ক্রমশ হল কর্মচারীদের সঙ্গে পড়ুয়াদের সংঘর্ষের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। পড়ুয়াদের একটি অংশ আরও দাবি করেছেন হল ম্যানজেমেন্ট কমিটি দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের কোনও মেস চালু করুক।
বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কথা বলা সম্ভব হয়নি আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur) কর্তৃপক্ষর সঙ্গে। তবে হল ম্যানেজমেন্ট কমিটির একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, এই বিষয়ের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগাযোগ নেই। এই অতিমারীর সময়ে তাঁদের তরফে কোনও মেস চালানো হবেনা এই শর্ত মেনেই পড়ুয়ারা ছাত্রাবাসে রয়েছেন। তাঁদের স্বার্থের কথা ভেবেই একটি বেসরকারি কর্তৃপক্ষকে এই মেসের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবুও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরও ৬০০পড়ুয়া ক্যাম্পাসে আসতে চলেছেন বলে জানা গিয়েছে।