নিজস্ব সংবাদদাতা: জীবনভর আতঙ্কের ট্রেন যাত্রার ভয়াবহ স্বাক্ষী হয়ে রইলেন এক ২০বছরের নববধূ। ভরা কামরায় তাঁকে ধর্ষণ করল ডাকাতদের একটি দল। যাত্রী সেজে একটি এক্সপ্রেস ট্রেনের জেনারেল কামরায় উঠে ৮ ডাকাতের ওই দলটি প্রায় ১৫জন যাত্রীর মোবাইল ফোন,

নগদ টাকা এবং সোনার গহনা লুটও করেছে বলে জানা গেছে। লুটপাটে বাধা দেওয়ায় চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হয় এক যুবককে। যদিও বরাত জেরে বেঁচে যান ওই যুবক। শুক্রবার সন্ধ্যার এই ঘটনাটি জানাজানি হয়েছে শনিবার কয়েকটি অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরই। ঘটনায় এখনও অবধি ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে ঘটনাটি ঘটেছে সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ লক্ষনৌ-মুম্বাই পুষ্পক এক্সপ্রেসে, ইগতপুরী এবং কাসারা রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী একটি ট্যানেল বা সুড়ঙ্গের ভেতরে মুম্বাইগামী ট্রেনটি প্রবেশ করার পরই। উত্তরপ্রদেশের এক নববিবাহিতা তরুণী তাঁর স্বামীর সঙ্গে ওই ট্রেনযাত্রায় সফর করছিলেন। পরবর্তী কালে ওই তরুণী তাঁকে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছে রেল পুলিশ।
জানা গেছে ট্রেনটি ট্যানেলে প্রবেশ করার পরই দুষ্কৃতিরা বেল্ট, ছুরি, নানচাকু ইত্যাদি বের করে যাত্রীদের সামনে হাজির হয় এবং তাঁদের সমস্ত কিছু দিয়ে দেওয়ার জন্য হুকুম করে। যাত্রী সেজে ট্রেনে ওঠা এই দুষ্কৃতিরা ঈগতপুর স্টেশন পের হওয়ার পরই স্বমূর্তি ধারণ করে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। যখন এরা নববধূকে লক্ষ্য করে এগিয়ে যায় তখন তাঁর স্বামী এবং কয়েকজন সহযাত্রী দুষ্কৃতিদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের মারধর করা হয় এবং ছুরি চালিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়।
ট্যানেলে ঢোকার পরই গাঢ় অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল ট্রেনের ওই অসংরক্ষিত কামরাটি। আর সেই সুযোগেই ওই ধর্ষণের ঘটনাটি দুষ্কৃতিরা ঘটিয়েছে বলেই জানা গেছে। অভিযোগ একাধিক দুষ্কৃতি পরপর ধর্ষন করেছে ওই নববধূকে। সঙ্গে ব্যাপক শ্লীলতাহানি ঘটানো হয়েছে। ঘটনার পরপরই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয় পরবর্তী স্টেশনেই আর পঞ্চমজনকে গ্রেপ্তার করা হয় পরের দিন অর্থাৎ শনিবার। পুলিশ জানিয়েছে যেহেতু অসংরক্ষিত কামরায় সাধারণভাবে আরপিএফ থাকেনা তাই ওই কামরাকেই নিশানা করেছিল দুষ্কৃতিরা।
এই যাত্রীদের মধ্যেই অঙ্কুশ কুমার নামে এক ২১বছরের যুবক নিজের মোবাইল ফোন দুষ্কৃতিদের হাতে তুলে দিতে না চাওয়ায় তাঁকে ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে দরজার বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। ঘটনাচক্রে তার সামান্য আগেই একজন যাত্রী ট্রেনের চেন টেনে দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমে গিয়েছিল। ফলে নিজেকে বাঁচাতে সমর্থ্য হন অঙ্কুশ। সংবাদমাধ্যমকে অঙ্কুশ জানিয়েছেন, “ওরা আমার ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে আমাকে দরজার বাইরে ঠেলে দেয়। কিন্তু ট্রেনটি অত্যন্ত ধীর গতিতে থাকায় নীচে পড়েও নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম ওই সময় অন্য কামরার একজন দরজা দিয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে আমি ওই কামরায় উঠতে সক্ষম হই।” ট্রেনের মধ্যে কিছু একটা হচ্ছে এটা অনুমান করেই পরবর্তী স্টেশন কাসারায় আরপিএফ আধিকারিকদের নেতৃত্বে একটি বড় বাহিনী ট্রেনের জন্য বরাদ্দ প্ল্যাটফর্মের দখল নিয়ে নেয়। কিন্তু দুষ্কৃতিদের বড় অংশটাই পালাতে সক্ষম হয়। একজনকে পাকড়াও করে তারা।
এদিকে ট্রেনের মধ্যে গণধর্ষণের খবর জানতে পারার পরই রেলপুলিশের কল্যাণ সদরদপ্তর যোগাযোগ করে তাদের ইগতপুরী শাখার সঙ্গে। পলাতক দুষ্কৃতিদের মধ্যে ২জন ততক্ষণ পালিয়ে ইগতপুরীতে নিজেদের জায়গায় পৌঁছেছিল। ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ২জনকে। এই ২জন মহিলার ধর্ষণের ঘটনায় যুক্ত ছিল। পরে আরও ৩ জন গ্রেপ্তার হয়। ধৃত ৬ জন হল প্রকাশ পার্ধি ওরফে পকায়া (২০), অর্জুন পরদেশী (২০), কিশোর সোনাবানে ওরফে কালু (২৫), ধনঞ্জয় ভগত (১৮), আকাশ সেনোরে (১৯)। এরা প্রত্যেকেই ইগতপুরী এলাকার বাসিন্দা। অপর একজন ধৃত ১৯বছরের আরশাদ সেখ মালাদের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
ধৃত এবং তাদের পলাতক সাকরেদদের বিরুদ্ধে পুলিশ ধর্ষণ, লুটপাট, ডাকাতি এবং রেল আইনের একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করেছে। এদের কয়েকজনের ক্রিমিনাল রেকর্ড রয়েছে পূর্বেই। মুম্বাই রেল পুলিশের কমিশনার কওয়াসের খালিদ জানিয়েছেন, প্রায় ৯৬ হাজার টাকার সামগ্রী লুট করেছিল দুস্কৃতিরা। এরমধ্যে ৩৪ হাজার টাকা মূল্যের সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে। (সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা অনুযায়ী নির্যাতিতা মহিলার নাম পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।)