নিজস্ব সংবাদদাতা: গত বৃহস্পতিবার থেকে ডজনে ডজনে লাশ গুনছে বিহার। বিষ মদের লাশ আর তালিকায় কেবলমাত্র হাড় হাভাতে গরিব মানুষ নন, রয়েছেন গ্রামে ছুটি কাটাতে আসা ভারতীয় সেনার জওয়ান থেকে বিএসএফ বা সীমান্তরক্ষীর জওয়ানও! বজ্র আঁটুনি আর ফস্কা গেরোর এক জ্বলন্ত উদাহরণ বিহার যেখানে সরকারি ভাবে বিহার Dry State বা মদ নিষিদ্ধ রাজ্য। শনিবার সন্ধ্যা অবধি সরকারি ভাবে ৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এখনও অবধি পাওয়া শেষ ৪টি মৃত্যুর মধ্যে বাড়িতে ছুটি কাটাতে আসা ভারতীয় সেনাবাহিনীর (Indian Army) এক জওয়ান ও এক BSF জওয়ান রয়েছে। বিহারের সমস্তিপুর জেলার পাটোরি থানার রূপাউলি পঞ্চায়েতের বাসিন্দা এই ৪ জন। পুলিশ জানিয়েছে এদের যেখানে পাওয়া গেছে তার পাশে বেআইনি মদের বোতল পাওয়া গেছে।

জানা গেছে গত ৪৬দিনের মধ্যে এটি পঞ্চম ঘটনা যেখানে ফের বিষমদের কারনে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। জানুয়ারি মাস থেকে এই নিয়ে এখনও অবধি বিষমদ খেয়ে ৯৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল আর এটা বারবার দেখিয়ে দিচ্ছে যে নীতিশ কুমার নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এ্যলায়েন্স বা NDA বেআইনি মদের কারবার রুখতে কতটাই অপদার্থ। ২০১৬ সালে মদ নিষিদ্ধ করলেও বেআইনি মদের কারবারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই কার্যকরী ভাবে নিতে পারেনি নীতিশ সরকার। উল্টে অভিযোগ যে বেআইনি মদের কারবারীদের সঙ্গে মোটা টাকার লেনদেন রয়েছে পুলিশ ও আবগারি বিভাগের মধ্যে আর তারই দৌলতে রাজ্য জুড়ে বিষ মদের রমরমা কারবার ফেঁদে বসেছে রাজ্য জুড়েই।
অভিযোগ উঠেছে দিওয়ালী আর ছটপূজো উপলক্ষ্যে এই কারবার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎসবের আতিশয্যে দেদার মদ্যপান চলছে বিহারের জেলার পর জেলায় থেকে গ্রামের পর গ্রামে। তারই সুযোগ নিয়ে চোলাই বা অনিয়ন্ত্রিত বিষমদতাদের পেটে ঢুকেছে মদের নামে। বৃহস্পতিবার থেকে মুজফফরপুর, গোপালগঞ্জ ও চম্পারণ এলাকা থেকে একের পর এক যে মৃত্যুর খবর আসছিল শনিবার শুধু এই তিনটি এলাকাতেই তা বেড়ে হয়েছে ৬৮ জন।
মুজফফরপুরের মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩। পশ্চিম চম্পারণে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি আরও একাধিক। গোপালগঞ্জে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। বিষমদ কাণ্ডে যুক্তদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে বিহার প্রশাসন। চোর পালালে যেমন বুদ্ধি বাড়ে তেমনই নীতিশ কুমারের নির্দেশে কড়া হয়েছে পুলিশ। চলছে ধরপাকড়। অন্যদিকে বিষমদ কাণ্ড নিয়ে বিহারের রাজনৈতিক চাপানউতোরও তুঙ্গে। সে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল আরজেডির নেতা তেজস্বী যাদব অভিযোগ করেছেন, বিহারে মদ নিষিদ্ধ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ নীতীশ সরকার। রাতের অন্ধকার রমরমিয়ে চলছে মদের ব্যবসা।
এদিকে সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দাবি, “এই ঘটনার তদন্ত চলছে। যারা যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি মদবিরোধী প্রচারও চলবে।” যদিও গাঁ-গঞ্জে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে বিক্রি হচ্ছেই। আর প্রশাসনিক নজরদারি কমা থাকার জেরেই সেই মদ পান করে মৃত্যু মিছিলে যুক্ত হচ্ছে একটি নাম।