শশাঙ্ক প্রধান : কলেজের বরখাস্ত হওয়া অধ্যাপক ও অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে আগামীকাল, মঙ্গলবার ২১শে ডিসেম্বর থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ে অবস্থান বিক্ষোভে অনড় ভারত জাকাত মাঝি পারগনা মহালের পক্ষ থেকে গ্রামে গ্রামে মাইক প্রচার শুরু করে দেওয়া হল।

সোমবার দুপুর থেকে রাত অবধি একাধিক গাড়িতে করে মাইক প্রচার শুরু হয়েছে সবং তেমাথানি, লুটুনিয়া, বাদলপুর, চাঁদকুড়ি,বাড়জীবন, দশগ্রাম, সহ বিভিন্ন গ্রামগুলিতে। বাংলা এবং সাঁওতালি ভাষায় মাইক প্রচার করে জনগণকে যোগ দিতে বলা হয়েছে কলেজের সামনে। স্বাভাবিক ভাবেই অচল অবস্থা তৈরির সম্ভবনা দেখা দিয়েছে সবং কলেজে।
উল্লেখ্য কলেজের বাংলার অধ্যাপিকা পাপিয়া মন্ডির উদ্দেশ্যে জাতিগত বিদ্বেষ মূলক উক্তি করার প্ররিবাদে কলেজেরই অধ্যাপক নির্মল বেরাকে বরখাস্ত ও গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল ভারত জাকাত মাঝি পারগনা মহল। তাঁদের আরও দাবি ছিল ওই অধ্যাপককে আড়াল করার চেষ্টায় ছিলেন অধ্যক্ষ তপন দত্ত। তাই তাঁকেও বহিস্কার করতে হবে।
১৭ই ডিসেম্বর অধ্যাপক বেরাকে বরখাস্ত করেন অধ্যক্ষ কিন্তু জাকাতের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বরখাস্ত নয়, গ্রেপ্তার করতে হবে অধ্যাপককে। সেই দাবিতেই আগামীকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজের সামনে অবস্থান শুরু হচ্ছে বলে জানিয়ে দিল আদিবাসী জনজাতির ওই সংগঠনটি।
সংগঠনের সবং মুলুক পারগনা বা সবং ব্লক স্তরীয় সংগঠনের সর্বোচ্চ নেতা মিঠুন মুর্মু জানিয়েছেন, আমরা গত ১৩ই ডিসেম্বর থেকেই এই অবরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিন্তু জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের ডাকে সাড়া দিয়ে, তাঁদেরকে মান্যতা দিয়েই ওইদিন অবস্থান স্থগিত করে তাঁদের সাথে আলোচনায় বসেছিলাম। ওনারা কথা দিয়েছিলেন আমাদের দাবি গুলি মেনে নেওয়া হবে। আমরাও প্রশাসনকে ৭দিন সময় দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি ২১ তারিখে পিছিয়ে দিয়েছিলাম। প্রশাসন সঠিক ব্যবস্থা নিলে হয়ত সেটাও করার দরকার হ’তনা।কিন্তু প্রশাসন মামুলি একটা সাসপেন্ড করেছে অধ্যাপককে। তাঁকে গ্রেপ্তার হয়নি, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সবং কলেজ অবরোধ শুরু করছি।
মিঠুন মুর্মু আরও জানিয়েছেন, “আদিবাসী সমাজের প্রতি অসম্মানমূলক উক্তি ও অপমানের বিরুদ্ধে কাল হাজার হাজার মানুষ সমবেত হতে চলেছেন সবং কলেজের সামনে। দাবি পূরণ না হওয়া অবধি আমাদের এই অবস্থান চলবে। আমরা যথেষ্ট সময় দিয়েছি। যেখানে তফসিলি জাতি উপজাতি আইনে ওই অধ্যাপিকা অভিযোগ দায়ের করেছেন সেখানে এখনও অবধি অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হলনা কেন সেই জবাব প্রশাসনকেই দিতে হবে।” এদিকে করোনাকাল কাটিয়ে দীর্ঘ ২০মাস পরে কলেজ খুলে সশরীরে পাঠ দান শুরু হয়েছিল কলেজে। নতুন বর্ষ বাদ দিলে কলেজের প্রায় প্রতিটি সেমিস্টারের পড়ুয়ারা চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছেন তারমধ্যেই এই বিড়ম্বনায় ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে পঠনপাঠন এমন আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
আগামীকালের এই কর্মসূচিকে ঘিরে টানটান উত্তেজনায় রয়েছে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। প্রতিমুহূর্তে সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আন্দোলনকে সীমিতস্তরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। নেহাতই যদি অবস্থান বিক্ষোভ শুরু হয় তবে যে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা এড়ানোই পুলিশ ও প্রশাসনের প্রধান চ্যালেঞ্জ। জেলা সদর থেকে বড়সড় বাহিনী ভোর বেলায় ঢুকে যেতে পারে সবংয়ে। বালিচক থেকে সবং ও বালিচক থেকে পটাশপুর এই দুটি প্রধান রাজ্য সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়। অবস্থানের ফলে দুটি রাজ্য সড়ক যাতে না অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে পুলিশের কাছে সেটাও বড় একটা চ্যালেঞ্জের।