নিজস্ব সংবাদদাতা: ১৭ বছর আগের এক বেনজির বর্বরতার শাস্তি হিসেবে এক স্বামী-স্ত্রীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনালেন অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক।

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে ঘাটাল মহকুমা আদালতের সরকারি আইনজীবী তপন ভট্টাচার্য জানান, “পাশবিক এই ঘটনাটি ঘটেছিল ১৭বছর আগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার বড় শিমুলিয়া গ্রামে। দিনটি ছিল ২০০৪ সালের ২২শে জুলাই। ওই গ্রামের এক কৃষক রতন সামন্ত ভোর সাড়ে চারটা নাগাদ নিজের গোয়ালে যাচ্ছিলেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য। রতনবাবুর সাথে তাঁর জ্ঞাতি তথা প্রতিবেশীদের বিরোধ ছিল। রতন বাবু গোয়ালে যাওয়ার পথ বালতি ভর্তি নাইট্রিক আ্যসিড ঢেলে দেওয়া হয় তাঁর শরীরে।”
সরকারি আইনজীবী বলেন, “ঘাতকরা এতটাই নিষ্ঠুর ছিলেন যে রতনবাবুকে ঘিরে ধরা হয় এবং বালতিতে রাখা ওই নাইট্রিক আ্যসিড মগে তুলে তুলে তাঁর শরীরে ঢালা হয়। মুখমন্ডল থেকে সারা শরীর প্রায় ৮৫ % পুড়ে যায়। তাঁর গগনভেদি আর্তনাদে ছুটে আসেন পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য প্রতিবেশীরা। তাঁকে প্রথমে দাসপুর গ্রামীন হাসপাতাল তারপর ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ক্ষত এতটাই মারাত্মক ছিল যে তাঁকে কলকাতার পিজি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। প্রায় ২মাস মৃত্যুর সাথে লড়াই করার পরে জয়ী হয় মৃত্যু। ৯ই সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় তাঁর।”
এই ঘটনায় জ্ঞাতি, প্রতিবেশী নন্দ সামন্ত ও তাঁর স্ত্রী শ্যামলী এবং নন্দর ভাই স্বদেশ ও স্বদেশের স্ত্রী নমিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন রতনের স্ত্রী বিভা সামন্ত। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ খুন, ষড়যন্ত্র ইত্যাদি একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে। গ্রেপ্তার হয় ওই চারজন। মামলা চলাকালীন জামিনও পেয়ে যান তাঁরা। এরপর দীর্ঘ মামলা পর্ব শেষে শনিবার তাঁদের দোষি সব্যস্ত করেন ঘাটাল মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক
সঞ্জয় কুমার শর্মা। বুধবার সেই মামলায় সাজা ঘোষণার দিন ছিল। বিচারক শর্মা নন্দ এবং শ্যামলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২০হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১০বছর সশ্রম কারাদন্ড দেন। অন্যদিকে স্বদেশ ও তাঁর স্ত্রী নমিতাকে ৫বছরের কারাদণ্ড ও ৫হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৫বছরের কারাদণ্ড কারাদন্ড প্রদান করেছেন।
বিভা সামন্তর আইনজীবী তপন রায় বলেছেন, ‘এই ঘটনার পেছনে সরাসরি ভূমিকা ছিল নন্দ ও শ্যামলীর তাই তাঁদের যাবজ্জীবন হয়েছে। অন্যদিকে স্বদেশ ও নমিতা এই ঘটনায় যুক্ত থাকলেও তাঁদের ভূমিকা প্রচ্ছন্ন থাকায় সাজার পরিমান কিছুটা কম হয়েছে। রায় ঘোষণার পর বিভা সামন্ত বলেন, ‘আমি স্বস্তিতে এবার মরতে পারব কারন আমার স্বামীর খুনিদের শাস্তি হয়েছে।’ নন্দ সামন্ত বলেছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করব আমরা।’