নিজস্ব সংবাদদাতা: মর্মস্পর্শী ঘটনার স্বাক্ষী রইল বন্যা দুর্গত পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর থানা এলাকার একটি গ্রাম। ঘুমের ঘোরেই খাট থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল দেড় বছরের এক শিশু কন্যার। ভগবানপুর- ১ ব্লকের কাজলাগড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার হিংচাগেড়িয়া গ্রামের এই ঘটনায় হাহাকারে ভেঙে পড়েছেন শিশুটির মা ও বাবা।

অনুমান করা হচ্ছে ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার গভীর রাতে যখন ওই শিশু কন্যার মা পরিবারের আরও কয়েকটি শিশুকে নিয়ে ওই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত ওই শিশুকন্যার নাম শুভশ্রী জানা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে গত প্রায় ১০দিন ধরেই জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের প্রায় ১২ থেকে ১৫টি ব্লক এলাকা। এর মধ্যে দুর্বিসহ অবস্থা ভগবানপুর ও পটাশপুরের ২টি করে মোট চারটি ব্লক এলাকা। ৪টি ব্লকের বেশিরভাগ গ্রামই জলমগ্ন হয়ে রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে হিংচাগেড়িয়া গ্রামও। ভগবানপুর এলাকার কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ত্রাণ শিবিরে। কিছু মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন উঁচু রাস্তা বা বাঁধের ওপর।
আর জলমগ্ন অথচ একটু শক্তপোক্ত ঘর রয়েছে এমন মানুষরা ঘরেই রয়েছেন খাট, মাচা, তক্তপোশ, জলচৌকি ইত্যাদিতে আশ্রয় নিয়ে। হতভাগ্য পরিবারের বাড়িটি ইটের দেওয়াল থাকায় ভেঙে পড়ার ছিলনা বলেই মৃত শিশুকন্যার বাবা-মাও তাঁদের আরও দুটি সন্তানকে নিয়ে ওই ঘরেই থেকে গিয়েছিলেন।
মৃত শিশুকন্যার বাবা জয়দেব জানা পেশায় টোটো চালক। কিন্তু এই বন্যায় গ্রামে টোটো আনতে পারেননি। বাড়ি থেকে অনেকটা দুরে একটি নিরাপদ জায়গায় টোটোটি রাখতে হয়েছিল তাঁকে। আয়ের একমাত্র উৎস ওই টোটো পাছে চুরি হয়ে যায় অথবা অন্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই আশঙ্কায় জয়দেব রাতে টোটোর কাছেই চলে যেতেন এবং রাত্রিবাস করতেন। বুধবার রাতে নিজের দুটি সন্তান ছাড়াও পরিবারের আরও দুটি সন্তানকে নিয়ে জলবন্দি ঘরের খাটের মধ্যেই ঘুমিয়ে ছিলেন বৈশাখী জানা।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, দেড় বছরের শুভশ্রীও ঘুমিয়ে ছিল মায়ের কোল ঘেঁসেই। কিন্তু হঠাৎই ঘুম ভেঙে দেখেন অন্য শিশুরা বিছানায় থাকলেও কন্যাটি বিছানায় নেই। লাফ দিয়ে জলভরা মেঝেতে নামেন তিনি। এরপরই খাটের নিচে উঁকি মেরে দেখেন খাটের তলায় জলে ভেসে রয়েছে ঐ শিশু কন্যাটি। পরিবার জানিয়েছে যখন তাঁরা এসে শিশুটিকে উদ্ধার করেন তখনই নিথর হয়ে গিয়েছিল তার দেহ। পরিবারে সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঘটনার খবর পেয়ে শোকের ছায়া ছায়া নেমে আসে এলাকায়। পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে নিজেরাও প্রাথমিক তদন্তের কাজ শুরু করেছে।
উল্লেখ্য চলতি বন্যায় ভগবানপুর এলাকায় এটি দ্বিতীয় একটি মর্মান্তিক ঘটনা। ৩দিন আগে এই থানা এলাকাতেই আরও একটি মর্মস্পর্শী ঘটনায় ২জনের মৃত্যু হয় ত্রাণকার্য পরিচালনা করে ফেরার পথে। সোমবার এই ঘটনাটি ঘটেছে ভগবানপুর ২ব্লকের ইটাবেড়িয়াতে। একটি ত্রাণকার্য পরিচালনা করার শেষে স্থানীয় গ্রামপঞ্চায়েত প্রধানকে নিজ বাড়িতে ছেড়ে ফেরার পথে জলস্তরের সামান্য উঁচুতে থাকা বিদ্যুতের সংস্পর্ষে চলে আসে ভুটভুটিটি। ভুটভুটিতে দাঁড়িয়ে থাকা দুই ব্যক্তি তেঘড়ি গ্রামের সৌরভ মন্ডল ও বাগদীবাদ গ্রামের প্রদীপ মাইতি উচ্চপরিবাহী বিদ্যুৎ তারের সংস্পর্ষে চলে আসায় দুজনই ছিটকে জলের স্রোতে পড়ে ভেসে যান। একজনের দেহ তৎক্ষণাৎ উদ্ধার করা হলেও অন্যজনের দেহ উদ্ধার হয় আরও অনেক পরে।