নিজস্ব সংবাদদাতা: গা জোয়ারি মনোভাব থেকে বাম শ্রমিক সংগঠনের পতাকা খুলে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল তৃনমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের পতাকা। ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই ফের সেই পতাকা নামিয়ে বাম সংগঠনের পতাকা লাগানোর সুযোগ করে দিলেন তৃনমূল কংগ্রেসের নেতারা।

শুধু তাই নয় যে দলীয় নেতা এই কাজ করেছেন তাঁকে ভর্ৎসনা করে আগামী দিনে এই কাজ করলে বরদাস্ত করা হবেনা বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে তৃনমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বের পক্ষ থেকে। বুধবার এমনই সৌজন্যের নজির রাখল খড়গপুরের রাজনীতি। বিরল এই রাজনৈতিক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন খড়গপুর শহরের সিপিআই ও সিপিএম নেতৃত্ব।
উল্লেখ্য গত সোমবার খড়গপুর শহরের মালঞ্চ এলাকায় ভগবতী বিস্কুট কারখানায় সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি (AITUC) এবং সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন (CITU)র নিজস্ব পতাকা স্তম্ভ থেকে দুই সংগঠনের পতাকা নামিয়ে তৃনমূল কংগ্রেসের শ্রমিক আইএনটিটিইউসির (INTTUC)পতাকা তুলে দেন শহর আইএনটিটিইউসির নেতা শৈলেন্দ্র সিং।
ঘটনার পরই তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয় শহরে। খড়গপুর শহরে এধরনের ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। নিন্দায় ফেটে পড়ে সমস্ত মহল এমনকি ওই কারখানার তৃনমূল সমর্থক শ্রমিকরাও এটা মেনে নিতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন এআইটিইউসি সিআইটিইউ নেতারা।
মঙ্গলবার সকালে আইএনটিটিইউসির নেতা শৈলেন্দ্র সিং সহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে এআইটিইউসির পক্ষ থেকে খড়গপুর টাউন থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ দায়ের করেন ভগবতী ফুড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি বিষয়টি জানানো হয় খড়গপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃনমূল কংগ্রেস নেতৃত্বকে। ঘটনা জানার পরই ঘটনার প্রকাশ্য নিন্দা করেন খড়গপুর পুর প্রশাসক প্রদীপ সরকার।
বুধবার সকালেই তৎপর হয়ে ওঠেন খড়গপুর শহর তৃনমূলের নেতারা। দুই শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের ওই কারখানায় হাজির হতে অনুরোধ করা হয়। কারখানার গেটে পৌঁছে যান খড়গপুর পুরপ্রশাসক প্রদীপ সরকার, প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পাল, আইএনটিটিইউসির খড়গপুর শহর সভাপতি সহ যুব নেতা অসিত পাল সহ অন্যান্য নেতারা। চলে আসেন এআইটিইউসির রাজ্য নেতা বিপ্লব ভট্ট, ভগবতী ফুড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। সিআইটিউ নেতা অনিত বরণ মন্ডল
সহ অন্যান্য নেতারা। সকলের উপস্থিতিতে নিজেদের পতাকা নামিয়ে নেন তৃনমূলের নেতারা। পরে নিজেদের পতাকা তোলেন দুই বাম সংগঠন।
এআইটিইউসি রাজ্য নেতা বিপ্লব ভট্ট বলেন ” আমরা
আপ্লুত। এটাই খড়গপুর, এটাই মিনি ইন্ডিয়া। মতামত যাই থাকুকনা কেন মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ১৯৯১ সাল থেকে আমরা সমস্ত শ্রমিক সংগঠনকে নিয়ে লড়াই করেছি। ভিন্ন মতাদর্শ হলেও এক সংগঠন অন্য সংগঠনের বিরুদ্ধে লড়াই করিনি। তৃনমূল নেতৃত্বকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তাঁরা এই উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা খুশি।” অপরদিকে খড়গপুর পুর প্রশাসক প্রদীপ সরকার বলেছেন ” এটা ত্রিপুরা নয়। পশ্চিমবাংলা, এখানে গণতান্ত্রিক বাতাবরণ নষ্ট হতে দেবনা। এখানে সমস্ত দল স্বাধীনভাবেই নিজেদের কাজকর্ম করবেন।’
তৃনমূল শ্রমিক সংগঠনের আরেক নেতা জানিয়েছেন, ‘আমাদের দলের মধ্যে থেকে দলকে বদনাম করার চেষ্টা এরপর আর বরদাস্ত করা হবেনা। যিনি এটা করেছেন তিনি অন্য দল থেকে কিছুদিন আগে আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। তাঁকে যথাযথ মর্যাদাও দেওয়া হয়েছে। সেই মর্যাদা তিনি ধরে রাখুন। নচেৎ আগামী দিনে তাঁর সমস্যা হবে।’ উল্লেখ্য অভিযুক্ত নেতা শৈলেন্দ্র সিং বিধানসভা নির্বাচনের মুখে বিজেপির থেকে তৃণমূলে আসেন আর তারপর থেকেই এই ধরনের বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। দলের একাংশ মারাত্মক ক্ষুব্ধ তাঁর আচার আচরণে। এদিনের ঘটনা তাকে সবক শেখানোর চেষ্টা বলে মনে করছেন অনেকে।