নিজস্ব সংবাদদাতা: অপারেশনের প্রয়োজন ছিল বাঁ হাতের কিন্তু চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেন ডান হাত খুইয়ে। চিকিৎসা বিভ্রাটের এই মারাত্মক নমুনায় শুধু একটা হাত চলে যাওয়াই নয়, প্রশ্ন উঠেছে শেষ অবধি চাকরিটা থাকবে তো? ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর শহরের। হতভাগ্য ওই যুবক রেলকর্মীর নাম সুভাষ দাস।

সুভাষ দাস দাবি করেছেন ২০১৪ সালে একটি দুর্ঘটনায় এই রেলকর্মীর বাম হাতের হাড় ভেঙে যায়। সেই সময় তিনি চিকিৎসা করিয়েছিলেন বিশিষ্ট অস্থি বিশেষজ্ঞ আব্দুল লতিফের কাছে। ওই সময় হাতে একটি প্লেট লাগানো হয়। যা কিনা পরের বছর ফের অপারেশন করে বের করার কথা। কিন্তু পরের বছর পরপর সুভাষের মা ও বাবার মৃত্যু হয়। ২০১৬ সালে রেলে চাকরি পান সুভাষ। সদ্য চাকরি পেয়েই ছুটি পাবেন কিনা ভেবে আর অপারেশন করেননি তিনি।
চলতি ডিসেম্বরে ওই প্লেট বের করার জন্য ফের ডাঃ লতিফের দ্বারস্থ হন তিনি। ৬ই ডিসেম্বর তিনি এই প্লেট বের করার জন্য মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেইদিন রাতে অস্থি বিশেষজ্ঞ আব্দুল লতিফ বাম হাতের প্লেট বের করেন। আ্যন্টিবায়োটিক ও অন্যান্য প্রয়োজনে একটি চ্যানেল করা হয় তাঁর ডান হাতে। সুভাষের অভিযোগ এই চ্যানেল করার ঘন্টা কয়েক পর থেকে যন্ত্রণা শুরু হয়। অভিযোগ সেইসময় বারবার অস্থি বিশেষজ্ঞ আব্দুল লতিফকে ডাকা হলেও কোনও সাড়া দেন নি। রাত এগারোটা নাগাদ যখন তিনি পৌঁছান ততক্ষণে হাতের অবস্থা ভয়ংকর আকার ধারন করে। তিনি রোগীকে দেখার পরেই কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে একটি রেফার চিঠিও করে দেন।
এরপরে সুভাষ দাসকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে রওনা হয় তাঁর পরিবার। কিন্তু সেখান থেকে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় গার্ডেনরিচে দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা শুরু হয়। পরবর্তীকালে তাঁকে রেলের সঙ্গে সংযুক্ত একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকরা পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ডান হাতের কনুই থেকে বাদ দেন। দু’দিন আগে তাঁকে খড়গপুর শহরের নিমপুরা এলাকার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে রীতিমতো বিধ্বস্ত রেলকর্মী সুভাষ দাস চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করেছেন।
ড: আব্দুল লতিফ বলেছেন, “দেখুন আমি একজন চিকিৎসক হিসাবে অপারেশন করেছি এবং যে হাতে অপারেশন করেছি তা সাকসেসফুল হয়েছে। বিষয়টা হয়েছে অন্য একটি হাতে যেখানে একজন নার্স ইঞ্জেকশন দিয়েছে। যে কোনও ভাবেই হোক ওনার আর্টারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অবস্থায় আমার কিছুই করার ছিলনা আমি পরামর্শ দিয়েছি কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার। একজন চিকিৎসক হিসাবে আমার খুবই খারাপ লাগছে কেননা অপারেশনটা আমি করেছি কিন্তু আবারও বলছি আমি যে কাজ করেছি সেখানে কোনও সমস্যা হয়নি।”