নিজস্ব সংবাদদাতা: বাঙালির ১২ মাসে যদি ১৩পার্বন হয় তো মিনি ইন্ডিয়া (Mini India) খড়গপুরে (kharagpur) ৩৬ পার্বন। দক্ষিণীদের মাতাপূজার পর মধ্য ভারত ও মহারাষ্ট্রর গণেশ পূজা। তারপর রেল শহরের বিশ্বকর্মা পূজা সেরেই শুরু হয়েছিল বাঙালির শারদোৎসব।

ছট বা ছটা আসলে সূর্যরশ্মির পূজা। যে রশ্মির উত্তাপে শস্যবীজের অঙ্কুরোদগম হয়ে থাকে, যার আলোকে আলোকিত এই দুনিয়া। যার প্রভাবে সৃষ্টির আসল রহস্য উন্মোচিত হয় তাই এই সূর্যরশ্মি বা ছটা। ছট পূজা (বা ছঠ পূজা) হিন্দু বর্ষপঞ্জীর কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে উদযাপিত একটি প্রাচীন হিন্দু পার্বণ। সূর্য্যোপাসনার এই অনুপম লৌকিক উৎসব পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলে পালিত হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে এই পার্বণ প্রবাসী ভারতীয়দের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত হয়েছে। ছট পূজা সূর্য্য ও তার পত্নী ঊষার (ছটী মাঈ) প্রতি সমর্পিত হয়, যেখানে তাকে পৃথিবীতে জীবনের স্রোত বহাল রাখার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও আশীর্বাদ প্রদানের কামনা করা হয়। ছটে কোনও মূর্তি পূজা করা হয় না।
চারদিনের এই ব্রতের প্রথম দিনে ব্রতধারী বাড়িঘর পরিষ্কার করে স্নান সেরে শুদ্ধাচারে নিরামিষ ভোজন করেন (যাকে নহায়-খায় বলা হয়)। পরদিন থেকে উপবাস শুরু হয়; ব্রতী দিনভর নির্জলা উপবাস পালনের পর সন্ধ্যায় পূজার শেষে ক্ষীরের ভোগ গ্রহণ করেন (এটি খরনা নামে পরিচিত)। তৃতীয় দিনে নিকটবর্তী নদী বা জলাশয়ের ঘাটে গিয়ে অন্যান্য ব্রতীর সাথে অস্তগামী সূর্যকে অর্ঘ্য অর্থাৎ দুধ অর্পণ করা হয়। ব্রতের শেষদিনে পুনরায় ঘাটে গিয়ে উদীয়মান সূর্যকে পবিত্র চিত্তে অর্ঘ্যপ্রদানের পর উপবাসভঙ্গ করে পূজার প্রসাদরূপে বাঁশ নির্মিত পাত্রে সুপ, গুড়, মিষ্টান্ন, ক্ষীর, ঠেকুয়া, ভাতের নাড়ু এবং আখ, কলা, মিষ্টি লেবু প্রভৃতি ফল জনসাধারণকে দেওয়া হয়।
খড়গপুর শহরের ইন্দা বয়েজস্কুলের পুকুর, খরিদা মন্দিরতলা ও জৈন তলাব, মালঞ্চ উটপুকুর, আয়মার শশ্মান লাগোয়া পুকুর, নিমপুরা পৌরসভার তৈরি করা জলাশয় সহ খড়গপুর শহর ও শহর লাগোয়া অন্তত ৫০টি ছোটবড় জলাশয়ে বুধবার ভিড় করেছেন পুণ্যব্রতী মহিলারা। মঙ্গলবার খরনা খাওয়ার পর থেকে যে উপবাস শুরু হয়েছিল তা আজ সারাদিন চলবে। বৃহস্পতিবার ভোরে ফের ওই সমস্ত পুকুরে বা জলাশয়ে গিয়ে ঊষা প্রণাম করে উপবাস ভঙ্গ করবেন মহিলারা। স্বামী, সন্তান এবং সংসারের মঙ্গল কামনায় এই ব্রত। কেউ কেউ খড়গপুর শহর ছেড়ে ভিড় জমিয়েছেন কাঁসাই নদীর পাড়েও। অনেকেই পঞ্চমীর দিন উইপোকার ঢিপি কিংবা মাটির গর্তে ডিম রেখে আসেন সাপের খাদ্য হিসেবে। এই সময় সাপ যেহেতু শীতঘুমে চলে যায় তাই তার কাছে গিয়ে খাবার হিসাবে ডিম দিয়ে আসা। জীব ও প্রকৃতিকে ভালোবাসার এই অনুপম নির্দশন খড়গপুরে এলে দেখতে পাওয়া যাবে। ছট উপলক্ষ্যে শহরের পুকুর ও জলাশয়গুলিকে পরিষ্কার পরিছন্ন করার পর আলোকসজ্জায় সজ্জিত করেছে খড়গপুর পৌরসভা। দুর্ঘটনা এড়াতে রাখা হয়েছে কড়া নজরদারি।