নিজস্ব সংবাদদাতা: রবিবার আন্দোলনরত কৃষক বনাম বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের জেরে মৃত্যু হয়েছে অন্ততঃ ৮জনের যার মধ্যে ৪জন কৃষক রয়েছে বলে জানা গেছে। এই চার কৃষক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর গাড়ির কনভয়ে পিষে গেছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে এই ঘটনার পরই আন্দোলনরত কৃষকরা ৩ বিজেপি কর্মী ও গাড়ির চালককে পিটিয়ে মেরেছে বলে জানা গিয়েছে।

সংযুক্ত কৃষক মোর্চার তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, রবিবার উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রর সফরকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদের আয়োজন করা হয় লখিমপুর খেরিতে। সেখানে হাজার হাজার কৃষক জড়ো হয়েছিলেন। সেখানেই অজয় মিশ্রর ছেলে আশিস গাড়ি চাপা দিয়ে প্রতিবাদী কৃষকদের মারেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই ঘটনায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে সংযুক্ত কিসান মোর্চা। অন্য দিকে লখিমপুর খেরির অতিরিক্ত পুলিস সুপারকে উদ্ধৃত করে একটি সংবাদ সংস্থা দাবি করেছে, মোট মৃত্যু হয়েছে আট জনের। যাঁদের মধ্যে কৃষকরাও রয়েছেন। এর মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে মন্ত্রীর কনভয়ের গাড়িতে চাপা পড়ে। যে গাড়িতে মন্ত্রী-পুত্র ছিলেন। যদিও বাকিদের কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
কিসান মোর্চার তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, মন্ত্রী-পুত্র গুলি করে এক প্রতিবাদী কৃষককে মেরেছেন। তবে সবটাই এখনও অস্পষ্ট। মন্ত্রী নিজে অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে ঘটনাস্থলে ছিলনেননা। মন্ত্রীর দাবি তাঁর ছেলে ওখানে থাকলে আক্রমণকারী কৃষকদের হাত থেকে বেঁচে ফিরত না। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র অভিযোগ করেছেন, গোটা ঘটনাই ষড়যন্ত্র। তাঁর ছেলে ওই সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ঘটনায় তাঁর গাড়ির চালক ও তিন বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে সংযুক্ত কিসান মোর্চা। সোমবার বেলা ১টা থেকে দেশের জেলায় জেলায় জেলাশাসকের অফিসের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত করার ডাক দেওয়া হয়েছে। কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে পঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে প্রতিবাদী কৃষকরা উত্তরপ্রদেশে আসতে শুরু করেছেন। ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছেন বলেও দাবি করা হয়েছে কৃষক সংগঠনের তরফ থেকে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ওই ঘটনার প্রতিবাদে কৃষকরা গাড়ি জ্বালিয়ে দেন। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, গোলমাল এড়াতে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হতে পারে।
এদিকে দেশজোড়া তীব্র ক্ষোভের মুখে ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ‘‘দ্রুত তদন্ত হবে, অভিযুক্তরা শাস্তি পাবে।’’ উল্লেখ্য সামনেই উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন। তার আগে গত প্রায় ১০মাস ধরে চলে আসা কৃষক আন্দোলন তুলতে মরিয়া যোগী সরকার কারন এই আন্দোলনের মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে নির্বাচনে। বিশেষ করে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে তীব্র কৃষক রোষ ছড়িয়ে পড়েছে। এই অংশেই রাজধানী গামী জাতীয় সড়কে মাসের পর মাস ধরে বসে রয়েছেন কৃষকদের একটা বড় অংশ। অভিযোগ এই আন্দোলন ভাঙার জন্য নানা কৌশল গ্রহন করেছেন যোগী আদিত্যনাথের সরকার। সেই নিয়ে কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ ছিলই। রবিবারের ঘটনা সেই ক্ষোভের আগুনে ঘি দিল কিনা সেটাই এখন দেখার।