নিজস্ব সংবাদদাতা: অবশেষে মেদিনীপুরের কেরানীচটির সেই তিন পেয়ে কুকুর ছানাকে দত্তক পাইয়ে দিতে সক্ষম হল শিবু রানাদের পশুপ্রেমী সংগঠনটি। রবিবার কেরানীচটির রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্মার এক ব্যক্তির কারখানায় ওই তিন পা ওয়ালা কুকুর ছানা ও তার আরও দুই সহোদরকে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিবু রানা।

কারখানা মালিক ৩টি কুকুর ছানাকেই দত্তক নিয়েছেন। দু’মাস বয়সী কুকুর ছানার দলটি কেরানীচটির সংলগ্ন জাতীয় সড়কে থাকার ফলে যে কোনও সময় গাড়ি চাপা পড়তে পারত বলে গত কয়েকদিন ধরে ওই তিন পা ওয়ালা কুকুর ছানাকে দত্তক নেওয়ানোর চেষ্টা করছিল শিবুদের মিডনাপুর এন্ড খড়গপুর স্ট্রিট আ্যনিমেল লাভার্স গ্রূপ। তারা জানিয়েছেন, কেরানীচটি এলাকায় প্রচুর কুকুরের বাচ্চা হয় কিন্তু বেশিরভাগটাই গাড়ি চাপা পড়ে মারা যায়।
মিডনাপুর এন্ড খড়গপুর স্ট্রিট আ্যনিমেল লাভার্স গ্রূপের সদস্যরা গত ৫ বছরের ১৫হাজার কুকুরের চিকিৎসা করেছে। যারমধ্যে সবচেয়ে গুরুতর পার্ভো রোগ। মারাত্মক এই পার্ভোভাইরাসে আক্রান্ত কুকুরদের ৯০%ই মারা যায়। রাস্তার আক্রান্ত কুকুরদের স্যালাইন দেওয়া, ইনজেকশন দেওয়া,
আহত কুকুরদের চিকিৎসা করা ইত্যাদি সবই করে শিবু এবং তাঁর সহযোগী রিমা কর্মকার, রাজা দাস, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, সৌরভ দাস অধিকারী, ববি সিং, সৌলিনী দে, দেবরাজ চক্রবর্তী, নীলাদ্রি শেখর দে, প্রিয়াঙ্কা সাহা, কৌশানি রায়, সমীর দত্ত, অগ্নিপ্ৰভ সেন, ঋক চৌধুরী, রতন তামাং সহ সংগঠনের সদস্যরা। এ যেন বনের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো!
শিবুরা জানিয়েছেন, লকডাউন শুরু হওয়ার সময় সব চেয়ে বিপদে পড়েছিল এই রাস্তার কুকুররা বিশেষ করে যারা বাজার এলাকায় থাকে। মিডনাপুর এন্ড খড়গপুর স্ট্রিট আ্যনিমেল লাভার্স গ্রূপের হিসাব অনুযায়ী খড়গপুর শহরে রাস্তার কুকুরের সংখ্যা ৭ হাজারের মত আর মেদিনীপুর শহরে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার।
এরমধ্যে লোকালয়ে থাকা কুকুরগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া খাবার পেলেও বাজার এলাকার কুকুরগুলো সমস্যায় পড়ে। ওই সময় প্রতিদিন দুই শহরের ১৫০০ কুকুরকে রান্না করা খাবার দিয়ে গেছে শিবুরা। প্রতিদিন ১কুইন্টাল চাল রান্না করা হত। বেশকিছু ব্যবসায়ী , সহৃদয় মানুষ সাহায্য করে গেছেন এই কাজে।
শুধুই রাস্তার কুকুরদের দেখভাল করার জন্য কলকাতার বেসকারি ব্যাঙ্কের দামি চাকরি ছেড়ে এসেছেন শিবু। সেই অর্থে কোনও আয়ও নেই। গৃহস্থের কুকুরদের সমস্যা হলে শিবু দেখতে যান। তারা কিছু টাকা দেয়। সব মিলিয়ে মাসে দু’হাজার, বাইশশো। তার মধ্যে দেড় হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া। বাকি টাকাও চলে যায় কুকুরদের চিকিৎসার পেছনে। নিজে দু-বেলার খাবার দিয়ে যায় বাড়ির লোকেরাই। সম্প্রতি কুকুরদের জন্মনিয়ন্ত্রণের কাজও শুরু করেছে মিডনাপুর এন্ড খড়গপুর স্ট্রিট আ্যনিমেল লাভার্স গ্রূপ। জানুয়ারিতে ৪০টি কুকুরকে বন্ধ্যাকরন করা হয়েছে। মার্চে লক্ষ্য আছে ৫০টি কুকুরের বন্ধ্যাকরন করার।