নিজস্ব সংবাদদাতা: গর্ভে সন্তান মারা গেলে তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেবেনা সরকারি হাসপাতাল! বলা হবে নার্সিংহোমে যেতে? রাজ্যজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ঢোল বাজানো স্বাস্থ্যকর্তারা কী জানেন কী চলছে সরকারি হাসপাতাল গুলোতে? গর্ভে মৃত সন্তান নিয়ে টানা ১২ঘন্টা চূড়ান্ত অমানবিক হয়রানির শিকার হতে হল এক গৃহবধূকে।

জানা গেছে খড়গপুর গ্রামীণ থানার বছর তেইশের ওই গৃহবধূ মমতা রানার বাড়ি পালঝারি গ্রামে। ৭ মাসের ওই প্রসূতির গর্ভের সন্তান নড়াচড়া করছেনা টের পেতেই পরিবারের লোকেরা বৃহস্পতিবার তাঁকে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরিবারের দাবি হাসপাতালের চিকিৎসক অবশ্য জানিয়েছিলেন যে সন্তান ঠিকই আছে। চিকিৎসক আরও জানান শুক্রবার ইউএসজি করে সন্তানের সঠিক অবস্থা জানা যাবে এবং সেই মত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুক্রবার ইউসিজি করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় রিপোর্ট আসে গর্ভস্থ সন্তান মৃত। তাঁর জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করার দরকার। ইতিমধ্যেই প্রসূতির জ্বর হতে শুরু করে। কিন্তু হাসপাতালের পরিকাঠামো নেই এই কারন দেখিয়ে শনিবার তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়।
সরকারি সুবিধা নিয়েই মাতৃযান আ্যম্বুলেন্স করে প্রসূতি ও তাঁর পরিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে এসে পৌঁছায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে দেখেন এবং ফের ইউএসজি করানো হয়। এবার চিকিৎসকরা রিপোর্ট দেখে বলে অন্ততঃ ৯৬ঘন্টা বা চারদিন আগে গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেন গর্ভে যেহেতু মৃত সন্তান রয়েছে তাই ওই মা কে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হবেনা। পরিবারের দাবি চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন কোনও বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে গিয়ে গর্ভপাত করিয়ে নিতে। প্রসূতির বাড়ির লোকেরা জানায় কেন তাঁরা বেসরকারি হাসপাতালে যাবেন? জবাব মেলেনি। অনেক রাত অবধি তাঁরা মেডিক্যাল কলেজের সামনেই বসে থাকেন, যদি কোনও একটা উপায় বের হয় কিন্তু শেষ অবধি কোনও উপায় বের হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনড় থাকেন ভর্তি না নেওয়ার নীতিতেই। ইতিমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হতে থাকে। খবর পেয়ে সংবাদমাধ্যমের লোকেরা পৌঁছে যায় হাসপাতালে।
এবার শুরু হয় ওই গৃহবধূকে খড়গপুর হাসপাতালে ফেরানোর প্রস্তুতি। এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর সাথে খড়গপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর কী কথা হয়েছে জানা যায়নি তবে খড়গপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফের ওই গৃহবধূকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় আবার তাঁকে রাতের বেলায় ফিরিয়ে আনা হয় খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে। যদিও খড়গপুর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে ফিরিয়ে নিলেও অপারেশন করার পরিকাঠামো তাদের সত্যিই নেই। রবিবার সকালে হয়ত আবারও গৃহবধূকে কোথাও রেফার করা হতে পারে। এক অনিশ্চয়তা নিয়ে গৃহবধূর পরিবার। গৃহবধূর জ্বর কী মৃতসন্তান দীর্ঘক্ষণ গর্ভে থাকার কারনে সংক্রমন থেকেই এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবার। দুশ্চিন্তা আর কত হয়রানির শিকার হতে হবে তাই নিয়েও।