নিজস্ব সংবাদদাতা: মাত্র ঘন্টা তিনেকের ব্যবধান! তার মধ্যেই রেল আবাসনের দরজা ভেঙে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে পালালো নেশাড়ু পাতাখোরের দল। বাড়িতে কে কখন থাকছেনা, কতক্ষন থাকছেনা তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রেখেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খড়গপুর শহরের ইন্দা ট্রাফিকের জনবহুল রাস্তার পাশে অবস্থিত একটি রেল আবাসনের ঘর ফাঁকা করে দিল এই দুষ্কৃতিরা। ঘটনায় স্তম্ভিত রেল আবাসনের আশেপাশের বাসিন্দারা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৯টা অবধি বাড়ি ছিলেননা ওই বিধবা এবং তাঁর মেয়ে। সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ নিজের আবাসন থেকে কিছুটা দুরে দক্ষিণ ইন্দা সংলগ্ন ওয়্যারলেস ময়দানে নিজের বোনের বাড়ি গিয়েছিলেন তাঁরা। ফিরে আসেন রাত্রি ৯টা নাগাদ। আর এসেই দেখেন বাড়ির পেছন দিকের দরজা ভেঙে আলমারি, ট্রাঙ্ক, শোকেশ ইত্যাদি যাবতীয় তালা ভেঙে সব নিয়ে গেছে দুষ্কৃতিরা। দুষ্কৃতিদের নেটওয়ার্ক এতটাই শক্তিশালী যে, আজই সকালে বিধবার একমাত্র ছেলে খড়গপুর শহর ছেড়েছে এটা অবধি জেনে গিয়েছিল তারা।
ঘটনাস্থল ইন্দা ট্রাফিক মোড় লাগোয়া, খড়গপুর সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার রাস্তার ওপর। ট্রাফিক মোড় থেকে ডানদিকে থাকা নিউট্রাফিকে রেলের NBT কোয়ার্টারের পাঁচনম্বর আবাসনটি। আবাসনটি রেলে কর্মরত অবস্থায় ৭মাস আগে মৃত রাজেনের। এখনও পেনশন চালু হয়নি রাজেনের বিধবা নর্মদার।
নর্মদা জানিয়েছেন স্বামীর মৃত্যু জনিত চাকরিটি মেয়ের পাওয়ার কথা ছিল, পেনশনের কাগজপত্র ছিল। সোনা গহনার সাথে সে সবও নিয়ে গেছে দুষ্কৃতিরা। খবর পেয়ে আধঘন্টার মধ্যে খড়গপুর টাউন থানার পুলিশ এসে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে যায়।
পেছনের পাঁচিল টপকে ঢোকা দুষ্কৃতিরা পেছন দিকে থাকা ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকেছিল এবং মোট ৩টা আলমারি, ২টি ট্রাঙ্ক, শোকেশ ইত্যাদি ভেঙে নিয়ে গেছে সোনারুপার গহনা। নিজের বিয়ের গহনা ছাড়া নাতির অন্নপ্রাশনের গহনা, মেয়ের আংটি ইত্যাদি মিলিয়ে লুট হয়েছে অর্ধলক্ষাধিক টাকা মূল্যের সামগ্রী। নর্মদা জানিয়েছেন, ‘ আমার ছেলের শ্বশুর অসুস্থ বলে বউমা নাতিকে নিয়ে কদিন আগেই টাটা চলে গিয়েছিল। ছেলে আজ সকালেই শ্বশুরকে দেখতে যায়। বাড়িতে আমি আর আমার মেয়ে ছিলাম। সন্ধ্যায় বোনের বাড়ি গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি এই কান্ড। আমার সর্বস্ব নিয়ে গেছে দুষ্কৃতিরা। পেনশনের টাকা, মেয়ের চাকরির কাগজ সব নিয়ে গেছে।
পুরো খড়গপুর শহর জুড়েই চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে। প্রাতঃভ্রমনকারী থেকে সান্ধ্যভ্ৰমনকারী কারুরই রেহাই নেই। নিমপুরা থেকে খরিদা, কৌশল্যা থেকে ডিভিসি প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও জায়গা থেকে আসছে দুষ্কর্মের খবর। ধরাও পড়েছে বেশকিছু দুষ্কৃতি কিন্তু লাগাম নেই দুষ্কৃতিরাজে। স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ এই কারবারের পেছনে রয়েছে মূলতঃ ব্রাউনসুগার সহ বিভিন্ন নেশাখোরদের দল। খড়গপুরের ভাষায় এদের বলা হয় পাতাখোর। একেকটি মটরডালের আকারের পুরিয়া কিনতেই চলে যায় আড়াইশ তিনশ টাকা। নিজেদের পরিবারকে সর্বশান্ত করার পর এরাই চুরি ছিনতাই করে বেড়াচ্ছে নেশার টাকা জোগাড় করতে। আর এদের জ্বালায় ঘুম মাথায় উঠেছে খড়গপুরবাসীর।