নিজস্ব সংবাদদাতা: পেছন থেকে ছুটে আসছে ট্রেন কিংবা কোনও জান্তব ধাবমান বস্তু। হাড় হিম করা টান টান সাসপেন্স। Moj অথবা Josh কিংবা Instagram এ ২ থেকে ১০ সেকেন্ডের ভিডিও। আপলোড করা মাত্রই হাজার হাজার শেয়ার। আর সেই শেয়ারের লোভেই প্রাণ হাতে করে দাঁড়িয়ে পড়া মৃত্যুর সামনে।

শনিবার ছুটির বিকালে তেমনই সেলফি তুলতে গিয়ে খড়গপুর আর মেদিনীপুরের মধ্যবর্তী কাঁসাই নদীর ব্রিজে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন দুই যুবক। আশঙ্কায় আরও এক যুবক। রেল সুরক্ষা বাহিনী (RPF)সূত্রে জানা গেছে মৃত এবং আহতরা মেদিনীপুর শহর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের নাম মুস্তাক আলি খান , আবীর গায়েন। আহত যুবকের নাম জুনমত গায়েন। প্রত্যেকেই মধ্য তিরিশের যুবক।
RPF সূত্রে জানা গেছে ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার বিকাল ৪.৩৫ নাগাদ যখন 38826 ডাউন হাওড়াগামী লোকাল ট্রেন মেদিনীপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে কাঁসাইয়ের পুরানো ব্রিজে উঠছিল। আরপিএফ সূত্রে জানানো হয়েছে সেলফি গ্রহণরত যুবকদের ট্রেনের চালক ব্রেক কষে ট্রেন দাঁড়ানোর চেষ্টাও করে। ঘাড়ের ওপর যমদূত দেখতে পেয়ে তিন যুবকও ট্রেনের সামনে সামনে ছুটে নিরাপদ দূরত্বে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু অপরিসর জায়গা হওয়ায় সেটা সম্ভব হয়নি। ৩জনকেই ধাক্কা মারে ট্রেনটি। একজন ট্রেনের ধাক্কাতেই মারা যায়। অন্যজন ছিটকে সেতুর নীচে পড়ে মারা যায়। অন্যজনও ছিটকে পড়ে ট্রেন লাইনের বাইরে। তাঁর চিকিৎসা চলছে।
আরপিএফ সূত্রে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, বিকালের দিকে কাঁসাইনদীর ব্রিজ ও তাঁর সংলগ্ন এলাকাটির নৈসর্গিক দৃশ্য, বিশেষ করে সূর্যাস্ত দেখার জন্য প্রতিদিনই প্রচুর মানুষ ভিড় জমান। এরই একটা অংশ চলে আসেন কাঁসাইয়ের নতুন ব্রিজের ওপর। এরা সাধারণত নতুন নির্মিত ব্রিজে জায়গায় দাঁড়িয়ে গল্পগুজব করেন, আড্ডা মারেন, ছবি তোলেন। এই ব্রিজে যথেষ্ট জায়গা আছে, ট্রেন আসলে সরে যাওয়া যায়। এখানেও অনেকে সেলফি তোলেন। কিন্তু এই যুবকরা পুরানো ব্রিজে গিয়ে চলন্ত ট্রেনকে পেছনে রেখে সেলফি তুলতে গেছিলেন যার অবিমৃশ্যকারীতার ফসলই হল আজকের এই দুর্ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ট্রেনের চালক ওদের দূর থেকে দেখতে পেয়ে বারবার সাবধান করে হর্ন বাজাচ্ছিলেন কিন্তু সেলফি তোলায় মশগুল প্রথমে সেদিকে নজরই দেননি। যখন তাঁদের নজরে আসে তখন ট্রেন অনেকটাই কাছে চলে এসেছে। এরপরই যুবকরা খড়গপুরের দিকে কাঁসাই হল্ট অভিমুখে ছুটতে থাকে। চালকও চেষ্টা করে প্রাণপনে গাড়ির গতি কমাতে কিন্তু শেষ অবধি তা আর সম্ভব হয়নি। ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে যান ৩জনই।