নিজস্ব সংবাদদাতা: ৪দিন ধরে মুখে প্ল্যাস্টিক কৌটো আটকে নাজেহাল হয়ে পড়েছিল একটি পথ কুকুর। খাওয়া দাওয়ার উপায় ছিলনা, উপায় ছিলনা আত্মরক্ষারও। অন্য কুকুরের দলের আক্রমনের তাড়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সেটি। পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পাওয়ায় দুর্বলও হয়ে পড়ছিল সেটি।

শেষ অবধি তাকে মুক্ত করতে সক্ষম হলেন ‘মেদিনীপুর খড়গপুর স্ট্রিট আ্যনিমেল লাভার্স গ্রূপ।’ এই ঘটনায় দুই পশুপ্রেমী আহতও হয়েছেন কিন্তু তারপরও হার মানেননি তাঁরা। অবশেষে চারদিনের চেষ্টায় বৃহস্পতিবার তাঁরা সক্ষম হন কুকুরটির মুখ থেকে কৌটো সরাতে। ঘটনায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন পাল বাড়ি এলাকার বাসিন্দারা। নিরীহ পথ কুকুরের মুক্তির আনন্দ তাঁদের মধ্যেও।
পশুপ্রেমীদের ওই সংগঠনটির অন্যতম সদস্য শিবু রানা জানিয়েছেন, মেদিনীপুর শহরের পালবাড়ি এলাকায় গত কয়েকদিন ধরেই মুখে প্ল্যাস্টিক কৌটো আটকে বিড়ম্বনায় পড়ে ছিল কুকুরটি। স্থানীয় মানুষদের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমরা লাভার্স গ্রূপের কয়েকজন বিষয়টি দেখার জন্য যাই। ওর বিহেভিয়ার পর্যবেক্ষণ করাটা আগে জরুরি ছিল।
কারন এক্ষেত্রে কুকুর খুবই মরিয়া হয়ে ওঠে আতঙ্কে। যেহেতু ওর মুখ আটকে রয়েছে তাই আতঙ্কে ও সর্বোচ্চ প্রতিরোধের চেষ্টা করে। মুখের বদলে নখই তখন মারাত্মক অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায়, ধরতে গিয়ে মানুষের হাতের শিরা ও ধমনী মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই আগে কুকুরটিকে পর্যবেক্ষণ করা খুবই জরুরি।’
শিবু জানান, খবর পাওয়ার দ্বিতীয় দিনের মাথায় কুকুরটিকে নাগালের মধ্যে পেয়ে গিয়ে তাকে ধরেও ফেলেছিলাম কিন্তু বিপদ হয়ে যায় তাকে মুক্ত করতে গিয়েই। ওর গলায় আটকে ছিল কৌটোর মুখ। সেইখানে আঙুল গলিয়ে কৌটো বের করার চেষ্টা করতেই কুকুরটা গলার শিরা উপশিরা ফুলিয়ে দেয় আতঙ্ক আর ক্রোধে। কৌটোর মুখের কোনও ধারালো অংশ কেটে বসে যায় আমার একটা আঙুল।
ওই অবস্থাতেই টের পাই গলগল করে রক্ত পড়ছে। ফলে সে যাত্রায় মুক্ত করা যায়নি কুকুরটিকে। তৃতীয় দিন অভিযানে নামে আমাদের সংগঠনের অন্য দুই সদস্য ঋক চৌধুরী, সর্পবন্ধু দেবরাজ চক্রবর্তীরা। কুকুরটি এমনই দৌড়াতে থাকে যে তাকে ধরতে গিয়ে আহত হন ঋক। ফলে ওই দিনও অভিযান ব্যর্থ হয়।
চতুর্থ দিন বৃহস্পতিবারের অভিযানে ফের নামেন শিবু রানা সঙ্গে নীলাদ্রি শেখর দে। শিবু জানান, ‘এদিন সকালেই খবর আসে কুকুরটি যে মাংস দোকানের ছাঁট খেত সেখানেই আশ্রয় নিয়েছে। প্লাস্টিক কৌটো স্বচ্ছ হওয়ায় কুকুরটা সব কিছু দেখতে পাচ্ছিল। ফলে দিনের বেলায় অন্য কুকুরের ভয়ে লোকালয়ের বাইরে লুকিয়ে থাকলেও সন্ধ্যায় ফিরে আসত ওই মাংস দোকানের ছাউনিতে।
সকাল অবধি সেখানেই থাকত। নিয়মিত মাংসের ছাঁট খাওয়ায় বেশ শক্তিশালী ছিল কুকুরটি। ৪দিন না খেয়েও অনেকটাই সবল ছিল। আমাদের দেখেই কুকুরটি পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে সঙ্কীর্ণ জায়গা হওয়ায় আমি তার একটি পা ধরতে ফেলতে পারি। নীলাদ্রি বস্তা নিয়ে চেপে ধরে তাকে। এরপর বাইরে থেকেই কৌটো ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বের করে আনা হয় কৌটো টাকে। তারপর সে কী মুক্তির আনন্দ! ওতেই সব যন্ত্রনা ভুলে যাই আমরা।
আ্যনিমেল লাভার্স গ্রূপের পক্ষ থেকে খড়গপুর মেদিনীপুরের বাসিন্দাদের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে বাড়ির কৌটো ইত্যাদি খাবার সহ ফেলবেননা। খাবার খেতে গিয়েই বেচারা পথের পশুরা এভাবেই বিপদে পড়ে যায়। সহৃদয় ও লড়াকু মানুষ না থাকলে মৃত্যু ছাড়া এদের গতি থাকেনা।