নিজস্ব সংবাদদাতা: রাতে ফিরে এসে বাবা মা আর বোনের সঙ্গে বড়দিনের রাতে মজা করবে বলে বেরিয়েছিল ছেলে। বাড়ি থেকে ৩০কিলোমিটার দুরে একটি ওষুধ দোকানে জরুরি ওষুধ সরবরাহ করার কথা ছিল কিন্তু ফেরা হলনা বাড়ি, দেওয়াও হলনা ওষুধ।

ঘটনার সময় উড়ালপুলের তলায় একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন ‘KGP বাংলা’র স্থানীয় সংবাদদাতা শশাঙ্ক প্রধান ও তাঁর বন্ধু ব্যবসায়ী প্রকৃতি জানা, শান্তনু পন্ডিত, চিত্তব্রত সামন্ত সহ কয়েকজন। শশাঙ্ক জানান, উড়ালপুলের ওপরে একটা বিকট আওয়াজ আমরা শুনতে পাই কিন্তু কিছু দেখতে পাইনি। কারন অত ওপরে দেখা যায়না। মিনিট খানেকের মধ্যেই ওপর থেকেই এক বাইক আরোহী আমাদের চিৎকার করে জানান যে ওপরে একটি ছেলে পড়ে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বাইক নিয়ে আমরা ছুটে যাই।’
শশাঙ্ক জানিয়েছেন, ‘ফ্লাইওভারে ঘুরে উঠে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে আমাদের মিনিট খানেকেরও কম সময় লাগে। গিয়ে দেখি ফ্লাইওভারের মাঝামাঝি পড়ে রয়েছে ছেলেটা। হেলমেট দু’টুকরো হয়ে গেছিল। একটা টুকরো পড়ে রয়েছে ৫০মিটার দুরে। কানে হেডফোন গোঁজা তখনও। শরীরের কোথাও কোনও বড়সড় আঘাতের চিহ্ন নেই। বাইকটা ঘুরে পড়ে রয়েছে খড়গপুরের দিকেই মুখ করে। সাথে সাথেই পুলিশকে ফোন করি আমি। পুলিশ আসতে সময় নেয় ৪ মিনিট। ছেলেটিকে তুলে আমার দু’কিলোমিটার দুরে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসি। চিকিৎসকরা সাথে সাথেই চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু সবচেষ্টা ব্যর্থ করে ছেলেটি কিছুক্ষনের মধ্যেই মারা যান।’
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সম্ভবতঃ মাথার ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে। বাইরে শরীর প্রায় অক্ষত। পায়ে সামান্য কাঁটা ছেঁড়া রয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান কোনও গাড়ি সরাসরি ধাক্কা মারেনি সত্যজিৎকে। অনুমান করা হচ্ছে কোনও গাড়িকে পাশ কাটাতে গিয়েছিল সত্যজিৎ। সেই সময় তার পাশে আরও একটি গাড়ি চলে আসে। কানে হেডফোন থাকায় সেই গাড়ির হর্ন শুনতে পায়নি। সেই গাড়িরই পাশে লেগে উড়ালপুলের পাশে ধাক্কা লেগে ফের ছিটকে উড়ালপুলের মাঝে পড়ে যায় সে। মাথায় হাফ হেলমেট ঠিক মত না পরায় তা আগেই মাথা থেকে খুলে পড়ে যায় আগেই। সরাসরি মাথা পড়ে ফ্লাইওভারের কংক্রিটের রাস্তায়।
ডেবরা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, আমরা বারবার বলছি হাফ হেলমেট পরা কিংবা ঠিকঠাক হেলমেটের বেল্ট না পরা আর হেলমেট না পরা একই ব্যাপার। পুলিশকে ফাঁকি দিতে অনেকেই হাফ হেলমেট, অকেজো হেলমেট পরেন। কেউ কেউ মাথার ওপরে হেলমেট চাপিয়ে রাখেন, বেল্ট বাঁধেননা। এই ঘটনা ফের প্রমান করে দিল আইনকে ফাঁকি দিতে গিয়ে কিভাবে নিজেকেই ফাঁকে পড়তে হয়। কানে হেডফোন থাকায় পেছনের গাড়ির উপস্থিতিও বুঝতে পারেনি বোধহয়। গাড়ি চালানোর সময় কানে ফোন, হেডফোন মারাত্মক বিপজ্জনক। দয়া করে নিজের পরিবারের কথাটা ভাবুন সবাই।
জানা গেছে মাত্র ২বছর হল ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছিল সত্যজিৎ। ঘয়লাগেড়িয়ার কৃষক তীর্থঙ্কর দে র বড় সন্তান সত্যজিৎ। বোন সোনাইয়ের বয়স ২১বছর। জকপুর হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে মাদপুর কলেজে পড়া শেষ করে এই চাকরি পেয়ে যায়। বাড়ির মানুষের ধারণা আষাঢ়ি বা রাধামোহনপুর কোনও একটি বাজারে ওষুধ সরবরাহ করতে যাচ্ছিল সে। সত্যজিৎয়ের জেঠামশাই হরিহর দে বলেছেন, ঠিক কোথায় যাবে বলে যায়নি সত্যজিৎ। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ওষুধ দেবে এবং কালেকশন করে ফিরবে বলে। রাতে ফিরে খাওয়া দাওয়া করবে বলেছিল।