নিজস্ব সংবাদদাতা: বছরের পর বছর ধরে নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কার না করার মূল্য দিল খড়গপুর শহর। মাত্র দেড় ঘন্টার ভারি বৃষ্টিতে ভেসে গেল খড়গপুর শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ। শনিবার বিকেল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। যার জেরে নিচু এলাকাগুলিতে জল জমছিলই কিন্তু সোমবার দুপুর পৌনে তিনটে থেকে বিকাল চারটে পনেরো অবধি প্রবল বর্ষণ বাদ রাখলোনা উঁচু এলাকাকেও। কার্যত গোটা খড়গপুর শহরের প্রায় সমস্ত এলাকাকেই সমান করে দিয়ে গেল।
সোমবাররের বৃষ্টিতে খড়গপুর শহরের এমন খুব কমই জায়গা রয়েছে যা আজ বৃষ্টির জলে ভেসে যায়নি। শুধু তাই নয় এমন অনেক জায়গা এই প্রথম জলবন্দি হতে দেখা গেল যে এলাকায় আগে কোনও দিনই জল জমতে দেখা যায়নি। এদিন খুবই খারাপ অবস্থা দেখা গিয়েছে খড়গপুর পৌরসভার ৩৩ নম্বর রবীন্দ্রপল্লী, দীনেশ নগর, হরিপুর এলাকায়।

নালা-নর্দমা-রাস্তা সব একাকার হয়ে গিয়ে একাধিক বাড়িতে হু হু করে জল ঢুকতে দেখা গিয়েছে। বহু মানুষকেই উঠতে হয়েছে দোতলায়। যাঁদের দোতলা নেই তাঁরা সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন জলচৌকি অথবা খাটের ওপর। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মাসের পর মাস ধরে এই এলাকায় নালা-নর্দমাগুলি পরিষ্কার করা হয়না। নতুন করে কাঁচা নালা কাটা হয়নি ফলে জল বেরুনোর কোনও জায়গা নেই। মাত্র দেড়ঘন্টার বৃষ্টিতেই অনেকের ঘরে জলের সঙ্গে ঢুকে পড়েছে নোংরা আবর্জনা।
একই অবস্থা ঝুলি এবং তলঝুলি এলাকায়। বুলবুলচটি, মীরপুরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি জায়গায় জল জমে যাওয়ায় তারা বাড়ির মধ্যেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এই এলাকারও বহু বাড়িতে জল ঢুকে পড়েছে। এমনই খবর পাওয়া গেছে খরিদা, মালঞ্চর বহু এলাকা থেকেই। সর্বত্রই একই অভিযোগ জলনিকাশি চরম অব্যবস্থার জন্যই ডুবছে গোটা শহর। বহু মানুষের ডিভান জলের তলায় চলে গিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে জামা কাপড় লেপ তোষক। ওদিকে পুরো আরামবাটিই কার্যত জলবন্দি হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে সোমবারের এই দেড়ঘন্টার বৃষ্টিতে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে সুভাষপল্লী, ভবানীপুর, দেবলপুর এবং সংলগ্ন পাঁচবেড়িয়া এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। দেবলপুর এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার দরুন রাস্তায় কোথাও কোথাও হাঁটু অবধি জল দাঁড়িয়েছে।
জল ঢুকছে উঠোন পেরিয়ে বহু মানুষের ঘরে। জলের সঙ্গে আবর্জনা ময় মানুষের ঘরবাড়ি, উঠোন। এলাকার মানুষজন অভিযোগ করেছেন এলাকায় পৌরসভা কোনও কাজই করছেনা। নালা, নর্দমার সাফাই হয়নি বহুদিন।
নিকাশি ব্যবস্থার এই বেহাল অবস্থায় যেমন শহরের একাংশ ডুবেছে তেমনই শহরের নয়ানজুলি আর জলাশয় বোঝানোর মাশুল দিচ্ছেন শহরের আরেক অংশের অধিবাসীরা। চোখের সামনে একের পর এক লুট হয়েছে খড়গপুর শহরের নয়ানজুলি। তারপর সেই নয়ানজুলি বুজিয়ে একের পর এক বাণিজ্যিক আবাসন অথবা শপিংমল।
শহরের জল কোন এলাকা দিয়ে নামবে ভাবাই হয়নি। পাশাপাশি বোজানো হয়েছে একের পর এক পুকুর ও জলাশয়। গত কয়েকবছর ধরে এই পুকুর লুটের পরিনাম এবার মেটাতে হচ্ছিল নিউটাউন, আনন্দনগর, শরৎপল্লী এলাকার বাসিন্দাদের। এবার সেই তালিকায় উঠে আসল ইন্দা কমলাকেবিন সংলগ্ন জীবনানন্দসরনীর বাসিন্দারাও। সোমবারের দেড়ঘন্টার বৃষ্টিতে রাস্তায় জল জমে উপচে তা ঢুকতে শুরু করেছে মানুষের উঠোন পেরিয়ে ঘরে।
জীবনানন্দসরনীর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত ৪০বছরের বেশি সময় ধরে গড়ে ওঠা এই এলাকায় কোনোদিন জল জমতে দেখেননি তাঁরা। কিন্তু সোমবারের বৃষ্টি পুরো এলাকাকেই জলের তলায় নিয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অপেক্ষাকৃত
এই উঁচু অংশে জল ঢোকার একমাত্র কারণ খড়গপুর কলেজের সামনে থাকা নয়ানজুলি বুজিয়ে ফেলে বাণিজ্যিক আবাসন ও শপিংমল তৈরি। এই নয়ানজুলি দিয়েই এক সময় জল নেমে যেত শহরের উত্তরের বিস্তৃত ফাঁকা অংশে। এখন আর সে জল নামার কোনোও সুযোগ না থাকায় সামনের পুকুর উপচে পড়ে জল ঢুকতে শুরু করেছে মানুষের বাড়িতে।
এদিকে সোমবারের এই ভারি বৃষ্টিতে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে কমলাকেবিনের শরৎপল্লী, সারদাপল্লী, রামকৃষ্ণপল্লী ও আনন্দনগর। উল্টো দিকে নিউটাউনের রাস্তাও জলে ডুবে গিয়েছে। বিদ্যাসাগরপুরের অবস্থাও খুব খারাপ বলে জানিয়েছেন।
গোটা খড়গপুর শহরের বিভিন্ন অংশ থেকে নিজেদের দুর্দশার ছবি মানুষ মোবাইল বন্দি করে পাঠিয়েছেন ‘KGP বাংলা’র দপ্তরে। তার কয়েকটি মাত্র প্রকাশ করা সম্ভব হল। এদিকে সন্ধ্যার পরও বৃষ্টি হয়েই চলেছে খড়গপুর শহরে। আগামীকাল মঙ্গলবারও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে।