নিজস্ব সংবাদদাতা: মদ বিক্রীতে রাজ্যে রেকর্ডের পর রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু তারই পাশাপাশি গ্রাম থেকে শহর একের পর এক সংসার উজাড় হয়ে যাচ্ছে সবার অলক্ষ্যে। সংসারে সংসারে অশান্তি আর দারিদ্র্য যেমন চিরস্থায়ী হয়ে গেড়ে বসেছে তেমনই বাড়ছে মহিলাদের ওপর গার্হস্থ্য নির্যাতন। সেরকমই এক নির্যাতন থেকে মা কে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যু হল ছেলের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে গত শুক্রবার দুপুরে পরিবারের একটি ছাগল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলনা যা নিয়ে অর্জুন নায়েক ও তার স্ত্রীর মধ্যে বচসা শুরু হয়। এক সময় অর্জুন তার স্ত্রীকে মারধর করতে থাকেন। ওই সময় ঘরের মধ্যে সিডি বাজিয়ে গান শুনছিল লক্ষীকান্ত। মাকে মার খেতে দেখে সে ছুটে যায় মা কে বাঁচাতে। সে যখন মাকে টেনে নিয়ে অন্যদিকে চলে যাচ্ছিল সেই সময় অর্জুন বঁটির কাঠের অংশ দিয়ে ছেলের মাথায় আঘাত করে। আঘাতটি লাগে ঘাড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে লুটিয়ে পড়ে লক্ষীকান্ত। খবর পেয়ে পাড়া প্রতিবেশীরা অর্জুনকে মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। শনিবার তার মৃত্যু হয়।
এদিকে এই মারধরের ঘটনা প্রথমে চেপে গিয়েছিল পরিবার। ঘটনার সময় লক্ষীকান্তের স্ত্রী নিজের ৬ মাসের মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে ছিল। সেও জানতে পারেনি বিষয়টা। স্বামী অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে সে ছুটে আসে। এখানে এসে কানাঘুঁসো জানতে পারে স্বামীকে তার শ্বশুরই মেরেছে বলে। শনিবার যখন তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা চুপচাপ স্বামীকে দাহ করার উদ্যোগ নিয়েছে দেখে রুখে দাঁড়ায় গৃহবধূ। মৃতদেহ শশ্মানে নিয়ে যেতে বাধা দেয় সে। প্রতিবেশীদের মারফৎ সেই খবর পেয়ে ছুটে যায় খড়গপুর গ্রামীন থানার পুলিশ। শশ্মানের বদলে দেহ নিয়ে আসা হয় ময়নাতদন্তের জন্য। তখনই পুলিশ তুলে আনে অর্জুনকে।
স্থানীয় কিছু বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন এই সমস্ত কিছুর কারনই হচ্ছে চোলাই মদের রমরমা কারবার। এই এলাকায় বেশির ভাগ পুরুষই মদে আসক্ত। এমনকি নাবালকরাও মদের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। সারাদিনের উপার্জনের সিংহভাগই মদের পেছনে চলে যাচ্ছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন মহিলারা। প্রতিবাদ করলেই জুটছে মার। ধৃত অর্জুন মদ্যপ অবস্থাতেই স্ত্রীকে মারধর করছিলেন এবং শুধু তার ছেলেই নয় প্রথমে অর্জুনের স্ত্রীকে আগে বাঁচাতে গিয়ে মার খেতে হয় অন্য এক মহিলাকে। মার খেয়ে সেই মহিলা রনে ভঙ্গ দেওয়ার পরই লক্ষীকান্ত যায় বাবার হাত থেকে মা কে বাঁচাতে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, লক্ষীকান্ত নিজেও মদ্যপ ছিল যে কারনে তাঁর সাথে ঝগড়া করে স্ত্রী বাপের বাড়িতে চলে যায়।