নিজস্ব সংবাদদাতা: পুরানো আর নতুন মিলিয়ে ৭০০ হোটেল দিঘায়। শঙ্করপুর, মন্দারমনি, তাজপুর মিলিয়ে আরও প্রায় শ’তিনেক। জায়গা নেই কোথাও! শুক্রবার রাত থেকেই ১০০% বুকিং হয়ে গেছে হাজার হোটেলের পাশাপাশি দিঘা থেকে উদয়পুরের মধ্যবর্তী ছোট বড় আরও ৫০০ হোম-স্টে। কেউ রেখেছেন ৪জনের পরিবার তো কেউ নিজের বাড়িতে ঠাঁই দিতে পেরেছেন ৬জন অবধি।

সকালে সূর্যের মুখ দেখার সাথে সাথেই হোটেল ছেড়ে পর্যটকরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বিচে। শুরু হয়ে গেছে প্যারাগ্লিডিং থেকে সিবোটিং আর সমুদ্র স্নানের মাদকতা। ওদিকে দু’দিন ধরে যেন ঘুম নেই দিঘা থানা ও দিঘা কোস্টাল থানার। ২ডজন আধিকারিকের নেতৃত্বে শ’খানেক পুলিশ কর্মী, সিভিক আর প্রশিক্ষিত নুলিয়ার চোখ পড়ে রয়েছে সমুদ্রের ওপর। আকাশে উড়ছে ড্রোন ক্যামেরা। সমুদ্র বিপদ যেন না ঘটে তার দিকেই নজর। পাশাপাশি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে লোকজন মাস্ক পরছেন কি না, তার ওপরে নজরদারি চালাতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয় পুলিশ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সদর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী এবং মহিলা কমব্যাট বাহিনী পাঠানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সমুদ্রে নজরদারি চালাবে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
শুক্রবারই পুলিশের তরফে পৃথক পৃথকভাবে সেলফি জ়োন থেকে শুরু করে পিকনিক স্পট চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। শহর পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি জমায়েত এড়াতেই এমন ব্যবস্থা বলে জানিয়েছেন দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রশাসক মানস কুমার মন্ডল। বড়দিনের দিঘায় যে ব্যাপক ভিড়ের অনুমান ছিল শনিবার সকাল ৯টার সময়েই সেই অনুমান মিলে গেছে। বীরভূম থেকে বনগাঁ, কালনা-কলকাতা, মালদা মেদিনীপুরের গাড়ির ঢল নেমেছে পিকনিক স্পট গুলিতে। ঝাউয়ের জঙ্গল, সমুদ্রের পাড় কোথাও তিলধারনের জায়গা নেই। অমরাবতীপার্ক থেকে সায়েন্সসেন্টার উপচে পড়ছে ভিড়। তবে সমস্ত জায়গাতেই কোভিড বিধি মেনে চলতে বলা হচ্ছে ব্যবসায়ী-পর্যটক সকলকেই। বর্তমানে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলার চেষ্টা চলছে। তাই সব দিক খতিয়ে নজর দিতে বিশেষ তৎপর প্রশাসন। বিভিন্ন দ্রষ্টব্য জায়গায় যাতে কোনও বিশৃঙ্খলা না ঘটে সে জন্য ড্রোনের বিশেষ নজরদারি চলছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে।
তবে শনিবারের সবচেয়ে বড় চমক দিয়েছে সমুদ্রই। চলতি মরশুমে সেই ভাবে বাঙালির রসনা তৃপ্ত করতে পারেনি দিঘা। এবার দিঘায় ওঠেনি তেমন পরিমান ইলিশ। কিন্ত বড়দিনের ভোরে পর্যটকদের যেন উপহার পাঠিয়েছে সমুদ্র সান্তাক্লজ। শনিবার ভোর ৫:৩০ নাগাদ দিঘা মোহনার বেশ কয়েকটি আড়তে এ দেখা মেলে রুপোলি ফসলের। প্রায় দেড় হাজার কিলো মাছ ওঠে এদিন। দিঘা মোহনার ফিস এন্ড ফিস ট্রেডার্স পক্ষে সম্পাদক শ্যাম সুন্দর দাস বলেন, “প্রকৃতির পরিবর্তনে মৎস্যপ্রাণীকূলেরও পরিবর্তন ঘটছে। তা বেশ কয়েক বছর ধরে দেখাও যাচ্ছে। এই সময় দেখা যেত একটু ছোট সাইজের ইলিশ। বড় মাছ ডিম পাড়ার পর দেখা মিলল এই বেশি ওজনের ইলিশের।” তিনি আরও জানান, লক্ষণীয় বিষয়, মাছের ওজন ১কেজি, ১২০০ এবং দেড় কেজি! জলের ঘূর্ণায়ন ও প্রচুর পরিমাণে দক্ষিণ উপকূলে বৃষ্টিতে স্রোতের পরিবর্তন হয়েছে। তাতেই মাছের দেখা মিলছে। দক্ষিণ পূর্ব দিক দিয়ে মাছগুলো গভীর সমুদ্রে যায়। বিশেষ করে পড়শি রাজ্য ওড়িশায় এই মাছের দেখা একটু বেশি মিলছে। বড়দিনে পাতে ইলিশ পেয়ে খুশি বাংলা ও বাঙালি। সব মিলিয়ে দিঘা যেন বড়দিনে আনন্দের কল্পতরু।