নিজস্ব সংবাদদাতা: ভোট শেষ হলেই ফুটে উঠবে টিভি স্ক্রিনে সেই ছবি, বলা হবে দু একটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া মোটের ওপর নির্বাচন শান্তিপূর্ণ। কিন্তু এবারও কী তাই বলতে পারবেন সাংবাদিকরা? এমনই প্রশ্ন উঠে আসছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। রাজ্যের ১০৮ টি পুরসভায় নির্বাচন রবিবার। আর সেই রবিবার জুড়েই উত্তর থেকে দক্ষিণ বাংলা জুড়ে ব্যাপক ভোট লুট, ছাপ্পা আর হিংসার ছবি নজরে আসছে।

কলকাতায় সাংবাদিক পেটানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রীতিমতো রাস্তায় ফেলে বুকে পেটে চলল বেপরোয়া কিল-লাথি-ঘুষি। ঘটনার জেরে কার্যতই তোলপাড় এলাকা।সাত সক্কালে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দমদমের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে। জানা যাচ্ছে, এদিন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থীর অভিযোগ ছিল সকাল থেকেই বুথ দখল করছে তৃণমূল। দীপঙ্করকে মাটিতে ফেলে চলে বেধড়ক মারধর। চলে অমানুষিক লাথি, ঘুষির সঙ্গে অকথ্য গালাগালি। একই সঙ্গে ভেঙে দেওয়া হয় তাঁর বহুমুল্য ক্যামেরাটিও। কয়েকজন মহিলা তৃণমূল কর্মী ওড়না দিয়ে বাঁধেন তাঁর মুখও। ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন ওই সাংবাদিক। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তিনি।
আহত সাংবাদিক জানিয়েছেন, ‘অনেক জন বুকে পেটে লাথি মেরেছে। রাস্তায় ফেলে ২০-২৫ জন ঘিরে ধরে মেরেছে আমাকে। মাথার পিছনে ভারী কোনও জিনিস দিয়েও মেরেছে। সবার মুখে মাস্ক ছিল। আমি একথাও বলেছিলাম আমাকে মারছ মারো কিন্তু ক্যামেরাটার কিছু কোরো না। অনেক দাম ওটার। কিন্তু আমাকে মারার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে দিয়েছে ক্যামেরাটাও। পেটে অসহ্য ব্যথা করছে। কথা অবধি বলতে পারছি না।’ আপাতত চিকিৎসা চলছে ওই সাংবাদিকের।
কলকাতার গা ঘেঁষে উত্তর দমদম পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে খবর সংগ্রহ করতে যান এবিপি আনন্দের সাংবাদিক সুকান্ত মুখোপাধ্যায় ও চিত্র সাংবাদিক শ্যামল জানা। মেরে মুখ ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে সুকান্ত মুখোপাধ্যায়ের। বেধড়ক মারধর করা হয়েছে চিত্র সাংবাদিক শ্যামল জানাকেও। দুষ্কৃতীদের চড়াও হওয়ার ছবি ধরা পড়ে ক্যামেরায়। উদয়পুরের আলিপুর খেলার মাঠ এলাকায় সিপিএম প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ পেয়ে খবর সংগ্রহ করতে যান সুকান্ত। অভিযোগ, সেখানে বহিরাগতরা জড়ো হয়েছিল। ভোটারদের বাধা দেওয়া হচ্ছিল বলেও অভিযোগ করে সিপিএম। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী শিবশঙ্কর ঘোষ, ভোটারদের নিয়ে বুথের দিকে যাচ্ছিলেন। সেখানে ছিল সুকান্ত ও শ্যামল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন সন্দেহজনক ব্যক্তির পরিচয় জানতে গেলে, সুকান্তর উপর চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। বেধড়ক মারধর করা হয়, এবিপি আনন্দর সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিককে। ক্যামেরা ভেঙে ফেলে দেওয়া হয় ড্রেনে। জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয় বুম। দুষ্কৃতীদের কাউকেই এখনও ধরা হয়নি। গুরুতর জখম অবস্থায় সুকান্ত মুখোপাধ্যায় ও শ্যামল জানাকে বেলঘরিয়ার বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে পূর্ব মেদিনীপুরে কাঁথিতে ভোটের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে, রক্তাক্ত হলেন এবিপি আনন্দর সাংবাদিক এবং চিত্র সাংবাদিক। লাথি এবং ঘুঁষি মেরে, চিত্র সাংবাদিক ভগবান শাহের মুখ এবং চোখ ফাটিয়ে দেওয়া হয়। সাংবাদিক প্রকাশ সিনহাকেও মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়। ক্যামেরা এবং বুম কেড়ে নিয়ে, ভেঙে দেওয়া হয়। এই ঘটনা ঘটেছে কাঁথি পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের রহমানিয়া মাদ্রাসায়। সকাল পৌনে ন’টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। বুথের বাইরের মাঠে একশো থেকে দেড়শো জন জমায়েত করে দাঁড়িয়ে ছিল। এবিপি আনন্দর সাংবাদিক এবং চিত্র সাংবাদিক গাড়ি থেকে নেমে, তাঁদের বক্তব্য নিতে যেতেই, তাঁরা তেড়ে আসে। কোনও কথা বলার আগেই শুরু হয় বেধড়ক মারধর।
প্রথমেই চিত্র সাংবাদিক ভগবান শাহের ক্যামেরা কেড়ে, ভেঙে দেওয়া হয়। ঘুঁষি এবং লাথি মেরে চিত্র সাংবাদিকের মুখ-চোখ ফাটিয়ে দেওয়া হয়। প্রকাশ এগিয়ে যেতেই, তাঁকেও বেধড়ক মারধর শুরু হয়। তিনি সেখান থেকে বেরনোর চেষ্টা করলে, পিছন থেকে ধাওয়া করে, ধরে, মাটিতে ফেলে ফের শুরু হয় লাথি এবং ঘুঁষি মারা। প্রকাশের হাত থেকে চ্যানেলের বুম কেড়ে নিয়ে, ভেঙে দেওয়া হয়। সাংবাদিকের পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়া হয়। প্রায় ছ-সাত মিনিট ধরে এই তাণ্ডব চলে। শেষে তিনি যন্ত্রণায় চিৎকার করতে শুরু করলে, একজন এসে হামলাকারীদের সেখান থেকে সরায়। কোনও ক্রমে পালিয়ে বাঁচে দুই সাংবাদিক।