শশাঙ্ক প্রধান: কুকুরটা বারবার চিৎকার করে যাচ্ছিল কিন্তু কেন চিৎকার করছে কারন খুঁজেনি পরিবার। যদি একবারও কারন খুঁজতে যেত হয়ত বেঁচেই যেত সিভিক পুলিশটি। শুক্রবার প্রথমবার গলায় গামছা দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার সিভিক পুলিশ অভিজিৎ সামন্ত। কিন্তু পরিবারের নজরে পড়ে যাওয়ায় তাঁকে আটকে দেন পরিবারের লোকেরা।

শনিবার তাই নিজের মত করে ফাঁক খুঁজে নিয়েছিলেন তিনি। মা-বাবা দুরে ক্ষেতে ব্যস্ত ছিলেন। বৌদি দোতলায় নিজের ঘরে। ৬মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিশ্রাম নিচ্ছিলেন আর ৫বছরের মেয়েটি খেলায় ব্যস্ত উঠোনে। এরই মাঝে নাইলন দড়ি নিয়ে রান্না ঘরে চলে যান অভিজিৎ। কিন্তু দেখে ফেলে বাড়ির পোষ্যটি। তারস্বরে চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু কুকুরের ডাকে গুরুত্ব দেয়নি কেউ। আর তাতেই সব শেষ হয়ে গেল। অবশেষে শনিবার সন্ধ্যা ৭টার সময় কুকুরের ডাককে গুরুত্ব দিয়েই রান্না ঘরে গিয়ে সর্বনাশের খবর পেল পরিবার।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ৩৫ বছর বয়সী ওই সিভিক পুলিশের নাম অভিজিৎ সামন্ত। বাড়ি পিংলা থানার পিন্ডরুই গ্রামপঞ্চায়েতের অন্তর্গত চকচন্ডি গ্রামে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বাড়ির একটি অংশের কড়িকাঠ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় ওই সিভিকের দেহ। প্রাথমিকভাবে জানতে পারা গেছে মানসিক অবসাদ থেকেই এই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন ওই সিভিক পুলিশ। যদিও পরিবারের শোকগ্রস্ত সদস্যরা স্পষ্ট করে বলতে চাননি কিছুই। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে শুক্রবারও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন অভিজিৎ কিন্তু বাড়ির লোকের নজরে পড়ে যাওয়ায় সে যাত্রায় রক্ষা পান। তাঁকে অনেক বোঝায় বাড়ির লোকজন।
স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে সিভিক পুলিশের পাশাপাশি LIC এর এজেন্ট ছিলেন।গত ছয় মাস কন্সট্রাকশানের ব্যবসা শুরু করেছিলেন প্রথম দিকে ব্যাবসা ভালো চললেও গত ৭ মাস ধরে ব্যাবসায় অনেক ধার দেনা হয়ে গিয়েছিল তার জেরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তার জেরেই এই আত্মহত্যা বলে জানা গিয়েছে স্থানীয় গ্রামবাসীদের তরফ থেকে। বাড়িতে বাবা মা দাদা বউদি ও নিজের ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে থাকতেন অভিজিৎ। দাদা কর্মসূত্রে হলদিয়ায় থাকেন।
শনিবার ছুটি থাকায় বাড়িতেই ছিলেন। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর বিশ্রাম নিচ্ছিলেন স্ত্রী আর মেয়ের সাথেই। স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়েন, মেয়ে পাশেই কোথাও খেলতে চলে যায়। বৌদি নিজের ঘরে দোতলায় ছিলেন আর বাবা-মা বাড়ি থেকে সামান্য দুরে সবজি ক্ষেতে কাজ করছিলেন। বাড়ির পোষ্য জার্মান স্পিচ টমি বাঁধা ছিল রান্না ঘরের দাওয়ায়। অভিজিৎকে সেখানে ঢুকতে দেখেই চিৎকার শুরু করে সে। কিন্তু কেউ তেমন গুরুত্ব দেয়নি। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ টমির চিৎকার থামছেনা দেখে রান্না ঘরে যান অভিজিৎয়ের বৌদি। তখনই দেখতে পান গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছেন অভিজিৎ। চিৎকার চেঁচামেচিতে সবাই ছুটে আসেন। নামানো হয় তাঁর দেহ। পাড়ার ডাক্তার পরীক্ষা করার পর মৃত বলে ঘোষণা করে। ঘটনা স্থলে পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে পিংলা থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
এলাকার এক বাসিন্দা কৃষ্ণপ্রসাদ বেরা জানিয়েছেন জানিয়েছেন এলাকার খুব সুন্দর ছেলে ছিল কারো বিপদ দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়তো, গোটা পিংলা জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আফসোসের আরও কারন যে কুকুরের ডাককে গুরুত্ব দিলে হয়ত এবারও বেঁচে যেত অভিজিৎ। শনিবার রাত ১২টা, কেঁদেই চলেছে গোটা পরিবার, তখনও পরিবারকে বকেই চলেছে অভিজিতের প্রিয় জার্মান স্পিচ কুকুরটি। যেন বলতে চাইছে, কেন আমার কথায় গুরুত্ব দাওনি?