নিজস্ব সংবাদদাতা: পুলিশ নয় জনতার প্রতিরোধ দেখল দুই শহর, খড়গপুর ও মেদিনীপুর। পুলিশ দাবি করেছিল নাকা করে আটকে দেওয়া হয়েছে দুই শহরের প্রবেশ মুখ কিন্তু জনতা দেখল ৫০ জনের বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়ালো মেদিনীপুর শহরের একাংশ। পুলিশ দাবি করেছিল বুথে বুথে সশস্ত্র পুলিশ দিয়ে দুর্ভেদ্য করা হবে বুথের নিরাপত্তা কিন্তু জনতা দেখল খড়গপুর শহরের অন্ততঃ দুটি বুথে বোমা আর বন্দুক নিয়ে ঢুকে পড়ল দুষ্কৃতি বাহিনী।

তবে হ্যাঁ, প্রতিরোধও দেখল দুই শহর। প্রতিরোধের মুখে পড়ে পালাতে হয়েছে বাইক বাহিনীকে আবার বুথ ছেড়ে পালাতে হয়েছে সশস্ত্র দুষ্কৃতিদের। হ্যাঁ, হয়ত এরপরেও দুই শহরের অলিতে গলিতে, ভেতরে ভেতরে বুথ জ্যাম, ছাপ্পা হয়েছে কিন্তু তার জন্য খড়গপুর আর মেদিনীপুর একা কী করতে পারে, গোটা রাজ্যজুড়েই তো এদিনের পৌরভোট ‘বিধ্বংসী গণতন্ত্রের’ উৎসব দেখেছে। তারই মধ্যে কিছুটা হলেও ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত রাখলেন দুই শহরের মানুষ।
খড়গপুর ও মেদিনীপুরে দিনের শুরুতে ভোট দান শান্তিপূর্ণ হলেও দ্বিতীয় ভাগে বেশ কয়েকটি জায়গায় বুথ দখলের চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে শাসক এবং বিরোধী পক্ষ থেকে। এদিন দুপুরের দিকে খড়গপুর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে দুটি বুথে গন্ডগোলের খবর মিলেছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জনতা বিদ্যালয়ের একটি বুথে বন্দুক নিয়ে বুথ দখল করার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপি প্রার্থী সুরেশ পাণ্ডে।
পাণ্ডের অভিযোগ খড়গপুরের এক পরিচিত সমাজবিরোধী তার সঙ্গপাঙ্গ নিয়ে জনতা বিদ্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। এই সময় উপস্থিত বিজেপি প্রার্থী সুরেশ পাণ্ডে বুথের সামনে শুয়ে পড়েন এবং বলতে থাকেন, আগে আমাকে গুলি কর তারপর বুথ দখল করবে।’ এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ভোটের লাইনে দাঁড়ানো স্থানীয় মহিলারা। তাঁদের সম্মিলিত প্ৰতিবাদে পিছু হটে ওই দুষ্কৃতিরা। অভিযোগ দুষ্কৃতিদের হাতে প্রকাশ্যে বন্দুক দেখা গেলেও পুলিশ তাদের আটকায়নি উল্টে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
খড়গপুর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভারতী বিদ্যাপীঠ বুথ দখল করতে গিয়ে বিজেপি ও সিপিআই প্রার্থীদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয় শাসকদল কে।। সেখানে বিজেপির দুষ্কৃতিরা বুথ দখল করতে এসে ইভিএম মেশিন ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থল থেকে একটি বোমাও মিলেছে। তৃনমূল প্রার্থী প্রবীর ঘোষ অভিযোগ করেছেন, দুষ্কৃতিরা তাঁকে মারধর করেছে। এখানেও জনতার প্রতিরোধে শেষ অবধি দুষ্কৃতিরা পালায় বলে জানা গেছে। খড়গপুরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে অন্ধ্রস্কুলের সামনে তৃনমূল ও বিজেপি কর্মীরা একে অপরের বিরুদ্ধে বুথ জাম ও ছাপ্পার অভিযোগ তুলে রাস্তায় বসে পড়ে পথ অবরোধ শুরু করে দেয়।
অন্যদিকে খড়গপুর শহরের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ঘটেছে অন্য একটি ঘটনা। এখানে ভোট শেষ হওয়ার পর ভোট কর্মীদের দেখা যায় অটোরিকশায় করে ইভিএম মেশিন নিয়ে রওনা দিতে। তালবাগিচার অরবিন্দ স্কুল থেকে যখন ইভিএম মেশিন নিয়ে ভোট কর্মীরা যখন ডিসিআরসি বা স্ট্রংরুমের দিকে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখনই তাঁদের ঘিরে ধরেন জনতা। সমস্ত বিরোধীদলের এজেন্ট সহ জনতার দাবি, পুলিশের গাড়ির পরিবর্তে কেন খোলা অটোতে করে ইভিএম মেশিন নিয়ে যাওয়া হবে?
এদিন অবশ্য খড়গপুর শহরের বহু জায়গাতেই গাড়ি নয়, ইভিএম মেশিন নিয়ে অটোতেই আসতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু জনতার দাবি খালি ইভিএম নিয়ে আসা আর ভোট দেওয়া ইভিএম নিয়ে যাওয়া এক নয়। খোলা অটো নয়, পুলিশের গাড়িতেই ইভিএম নিয়ে যাওয়ার দাবিতে সোচ্চার হন জনতা। পরে আধিকারিকদের হস্তক্ষেপে রওনা দেয় ইভিএম মেশিন।
মেদিনীপুর শহরে রেললাইনের পশ্চিম দিকের তিনটি ওয়ার্ডে কিছু জায়গাতে এদিন অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হয়। মেদিনীপুর সদর গ্রামীন এলাকার দিক থেকে একটি বিশাল বাইক বাহিনী প্রবেশ করে। মনে করে হচ্ছে কঙ্কাবতী হয়ে জঙ্গলরাস্তায় গোপগড়, গোপ কলেজ লাগোয়া এলাকা দিয়েই ২০/২৫টি বাইক কোনও ঝান্ডা ছাড়াই প্রবেশ করেছিল। প্রতিটি বাইকে ২জন করে ছিল।
সম্ভবতঃ এদের লক্ষ্য ছিল ২৪ ও ২৫নম্বর ওয়ার্ডের ভোটারদের সন্ত্রস্ত করা। কিন্তু শহরের ইন্দিরাপল্লী, বৈশাখী পল্লী লাগোয়া এলাকায় এক সঙ্গে এত বাইক দেখেই চ্যালেঞ্জ করে জনতা। জনতার তাড়ায় এবার মুখ ঘুরিয়ে বাইক বাহিনী পালাতে থাকে। সিপিএমের তরফে অভিযোগ করা হয়, ২৪, ২৫ এবং ৪নম্বর ওয়ার্ড তৃনমূলের পক্ষে দখল নেওয়া অসম্ভব মনে করেই গ্রামীন এলাকা থেকে বাহিনী এনেছিল শাসকদল।
গতকাল রাতেও হাতিহল্কার দিক থেকে বাহিনী এনে সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা হয় ধর্মা লাগোয়া ৮নম্বর ওয়ার্ড। এদিন ৪নম্বর ওয়ার্ড টাউন কলোনীর একটি বুথে ঢুকে ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ ওঠে। বুকে তৃনমূলের প্রতীক লাগানো এক যুবককে ধাক্কা মারতে মারতে বুথের বাইরে বের করে দিতে দেখা গিয়েছে।